|
|
৫ পৌষ ১৪১৮ বুধবার ২১ ডিসেম্বর ২০১১
|
|
|
|
|
|
দেবালয় |
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ |
মাত্র একশো বছর আগেও কলকাতা ছিল এ দেশের রাজধানী। ১৯১১ পর্যন্ত রাজধানী হওয়ার সুবাদে অনেক ইংরেজ থাকতেন এই শহরে। এবং তাঁদের ধর্মাচারণের জন্য এ শহরে তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি গির্জাও। ইংরেজদের রাজধানী-শহর হলেও, কলকাতায় প্রথম গির্জা নির্মানের কৃতিত্ব কিন্তু আর্মেনীয়দের!
বাণিজ্যের টানে পর্তুগিজ, দিনেমারদের মতো আর্মেনীয়রাও কলকাতায় এসেছিল ব্রিটিশদের আগে। আজকের ব্রাবোর্ন রোড, চিনাবাজার অঞ্চলে ছিল তাদের প্রধান বসতি এবং একটি গোরস্থানও। অনুমান করা হয় ১৭ শতকের প্রথম ভাগেই আর্মেনীয়রা চুঁচুড়া হয়ে কলকাতায় আসে। ১৬৬৫ তে তাদের প্রথম চার্চ স্থাপিত হয় চুঁচুড়াতে। কিন্তু কলকাতায় আসার পরে সমবেত ভাবে উপাসনা করার জন্য তাদের কোনও গির্জা ছিল না দীর্ঘকাল। ১৭০৭-এ ইংরেজদের সহায়তায় আর্মেনীয়রা তাদের প্রধান বসতি অঞ্চলে গোরস্থানের ঠিক পাশেই নির্মাণ করে একটি উপাসনাগৃহ বা চার্চ (কাঠের তৈরি)। এটিই কলকাতার অন্যতম প্রাচীন গির্জা।
আর ইংরেজদের প্রথম গির্জা সেন্ট অ্যানস্ চার্চ স্থাপিত হয় তার দু’বছর পর, ১৭০৯-এ, বর্তমান রাইটার্স বিল্ডিং-এর পশ্চিম দিকে। ১৭৫৬-য় সিরাজ উদ-দৌলার কলকাতা আক্রমণের সময়ে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পলাশির যুদ্ধের পর বাংলায় ইংরেজ-রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পরে কলকাতায় আরও অনেক গির্জা স্থাপিত হলেও কলকাতার প্রাণকেন্দ্র সাবেক ডালহৌসি স্কোয়ার বা আজকের বিনয় বাদল দীনেশ বাগ অঞ্চলের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ-ই কলকাতার প্রাচীনতম গির্জা।
গ্রিক শৈলীর নিদর্শন এই চার্চটি যেখানে, আগে সেখানে ছিল পুরনো মেয়র্স কোর্ট। ১৭২৭ সালের রাজকীয় সনদ অনুসারে এই কোর্টে এক জন মেয়রের তত্ত্বাবধানে ইউরোপীয়দের বিচার হত। ১৭৭৪-এ সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হলে এটি উঠে যায়, কিন্তু নতুন বাড়ি না হওয়া অবধি কাজ চলত এখানেই। এই বাড়িতে বসেই ১৭৭৫-এর ৮ থেকে ১৬ জুন, বিচারপতি এলিজা ইম্পে মহারাজা নন্দকুমারের বিচার করেন। নন্দকুমারের ফাঁসি হয় ৫ অগস্ট ১৭৭৫। পরে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। পুরনো আদালত ভবনকে স্মরণে রেখে তার সামনের রাস্তার নাম করা হয় ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট। এখন অবশ্য সেটি বিবাদী বাগ (পূর্ব) নামে পরিচিত।
এখনকার মহাকরণের পূর্ব দিকে, ভেঙে ফেলা পুরনো আদালত ভবনের জমিতে ১৮১৫-য় সেন্ট অ্যান্ড্রুজ গির্জার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। মেসার্স বার্ন কুরি অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি এই চার্চ করতে খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের জমি এবং নগদ ১ লাখ টাকা দিয়েছিল সরকার। স্কটিশ মন্ত্রী জেমস ব্রাইসি ৮ মার্চ ১৮১৮-য় এই গির্জার দ্বারোদ্ঘাটন করেন। ১৮৩৫ সালে ৫ হাজার টাকা দামের একটি ঘড়ি বসানো হয় গির্জার টাওয়ারে। এই গির্জার ভিতরে আছে বেশ কয়েকটি মূল্যবান তৈলচিত্র। ডালহৌসি স্কোয়ারের পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ২০০৯-এ কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে সম্পূর্ণ আলোকিত করা হয় এই গির্জাটিকে। |
তথ্য ও ছবি: গৌতম বসুমল্লিক
|
|
|
|