|
বুধবার কমিশনার শ্রী পি সি মজুমদার কলিকাতা কর্পোরেশনের ১৯৬১-৬২ সালের জন্য ২৪,৫২,০০০ টাকার এক ঘাটতি বাজেট স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটিতে পেশ করেন।
বাজেট এইরূপ অনুমিত হইয়াছে যে, আগামী বৎসরের (১৯৬১-৬২ সাল) রাজস্বখাতে বৎসরের আয় ৮,৩৯,৫২,০০০ টাকা এবং ব্যয় ৮,৬৪,০৪,০০০ টাকা হইবে। ফলে ঘাটতির পরিমান দাঁড়াইবে ২৪,৫২,০০০ টাকা।
চলতি বৎসরের (১৯৬০-৬১ সালে) প্রারম্ভিক তহবিলে মজুদ ৩৬,৬৮,০০০, টাকা হইতে অনুমিত ঐ ঘাটতির টাকা মিটাইয়া আগামী বর্ষ শেষের (৩১শে মার্চ, ১৯৬২) মজুদ তহবিলে ১২,১৬,০০০ টাকা থাকিবে বলিয়া অনুমিত হইয়াছে।
স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটি উক্ত বাজেটের প্রয়োজনীয় সংশোধন করিবার পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কর্পোরেশনের সভায় উহা উপস্থাপিত হইবে।
কয়েকজন বিশিষ্ট কাউন্সিলার কমিশনারের ঐ বাজেটটিকে নিতান্ত মামুলী ও একঘেয়ে বলিয়া অভিহিত করেন। অবশ্য স্বয়ং কমিশনারের রিপোর্টের মধ্যেও ঐ সুরেরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটিতে ১৯৬১-৬২ সালের বাজেট উপস্থাপিত করিয়া কমিশনার শ্রী মজুমদার এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করেন যে, কর্পোরেশনের বৃহত্তর স্বার্থে কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট এ্যাক্ট সংশোধন করিবার জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করা একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন যে, বর্তমান আইন অনুযায়ী মহানগরীর জমি ও বাড়ীর কর ধার্য বাবদ সংগৃহীত মোট অর্থের শতকরা ১/২ অংশ কলিকাতা কর্পোরেশন হইতে ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টকে ছাড়িয়া দিতে হয়। কিন্তু এখন হইতে যাহাতে কর্পোরেশন হইতে শতকরা এক-চতুর্থাংশ ট্রাস্টকে দিতে হয় তাহার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ট্রাস্টকে ঐ বাবদ বাৎসরিক ৪২/৪৩ লক্ষ টাকা দিতে সক্ষম নয়।
কমিশনার শ্রী মজুমদার আরও বলেন যে, প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয় বাবদ একটা মোটা অঙ্কের সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারকে চাপ দিতে হইবে। বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের নিকট হইতে গৃহীত ঋণ বা অগ্রিম টাকা পরিশোধ করিতে পারিবেন না।
অন্যান্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে কমিশনার এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন যে, শহরের দূষিত জল বাহির করিবার কাজটি সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের হস্তে ন্যস্ত করিতে হইবে। কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংগঠন কমিটি গঠন করিতে হইবে। ঐ কমিটিতে কর্পোরেশনের কোন কর্মচারী থাকিতে পারিবেন না। বাজেট বর্হিভূত কোন পরিকল্পনা যাহাতে গৃহীত না হয় তাহার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
তিনি বলেন যে, বহু আবেদন নিবেদনের পরে গত ১৯৪৮ সালের ১লা এপ্রিল হইতে রাজ্য সরকার বর্ধিত হারে বাড়ীর কর দিতেছেন। মহানগরীর জমি এ বাড়ীর মুল্য বৃদ্ধি হওয়ার দরুণই রাজ্য সরকার বহুকাল পর বর্ধিত হারে কর্পোরেশনকে কর দিতেছেন। তিনি বলেন যে, পোর্ট কমিশনার কর্তৃপক্ষও বহুকাল পরে বর্ধিত হারে কর দিতে রাজি হইয়াছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁহাদের নিকট হইতে বর্ধিত হারে কোনরূপ কর আদায় করা হয় নাই। কারণ সংশোধনী হারে বিল এখনও পৌরসভার পোর্ট কমিশনার কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেন নাই।
কমিশনার শ্রী মজুমদার বলেন, কর্পোরেশনের এলাকাভুক্ত বাড়ী ও জমির কর আদায়ের ব্যাপারে ক্রমাবনতি হইতেছে। কর্পোরেশনের মোট আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ বাড়ী ও জমির কর বাবদ সংগৃহীত হয়। করদাতাদের ‘রিবেট’ ও সুদের সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে তাঁহারা কর দিতেছেন না। ফলে কর্পোরেশনের লক্ষ লক্ষ টাকা অহেতুক আটকা পড়িয়া আছে। সুতরাং ‘রিবেট’ সুদ দেওয়ার প্রথা চালু করার কর্পোরেশনের কোনরূপ উপকার হয় নাই। বরং ক্ষতিই হইয়াছে। তিনি বলেন যে, কালেকশান বিভাগে আরও অধিকসংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন। টালিগঞ্জের হাজার হাজার বিলের টাকা করদাতাগণের নিকট আটকা পড়িয়া থাকায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া তিনি মনে করেন। বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ লক্ষ টাকার বিল জমিয়া থাকায় কর্পোরেশনের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করিয়াছে।
১৯৬১-’৬২ সালের বাজেট কমিশনার কতকগুলি নূতন গঠনমুলক কাজের বাবদ ৪১,০০০ টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। ইহা ছাড়া ‘ফুটপাথের’ উন্নয়ন বাবদ এক লক্ষ টাকা এবং বিভিন্ন বরোর কাজের জন্য চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন।
|
|