|
শনিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রাতঃকালীন অধিবেশনে কলিকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পর্কে বিরোধী পক্ষ হইতে উত্থাপিত বেসরকারী প্রস্তাবের আলোচনাকালে বিরোধীপক্ষের সদস্যগণ কর্তৃক প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে কলিকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘টাল-বাহানা’র অভিযোগ তুলিয়া উহার তীব্র সমালোচনা করেন।
এইদিন খাদ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মী ছাটাই সম্পর্কে একটি বিবৃতিও দেন।
পৌরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি শ্রীমতী মণিকুন্তলা সেনের (কম্যু)। কয়েকদিন পূর্বে উহা বিধানসভায় উত্থাপিত হয় এবং উহার আলোচনা মুলতুবী ছিল। ঐ প্রস্তাবে ১৯৬১ সালের মধ্যে সর্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে কলিকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান হয়।
সরকার পক্ষের কয়েকজন সদস্যও ঐ প্রস্তাবের মূল নীতি মোটামুটি সমর্থন করেন। কিন্তু তাঁহারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের সমর্থন তাঁহারাও করেন, তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালেই ঐরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নহে বলিয়াই তঁহারা মনে করেন। জনৈক কংগ্রেসী সদস্য আরও বলেন যে, বয়স্ক ভোটাধিকারের বিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যের ব্যবস্থাদি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন পিছাইয়া দেওয়া উচিৎ।
প্রস্তাবটি সম্পর্কে ভোট গণনার দাবি জানান হইলে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ৯২ এবং পক্ষে ৪৬ ভোট পড়ে এবং প্রস্তাবটি অগ্রাহ্য হইয়া যায়।
শ্রীধীরেন ধর (কম্যু) বলেন যে, স্বল্পসংখ্যক লোকের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যবস্থাকে জিয়াইয়া রাখাই সরকারে অভিপ্রায়। কারণ উহার দ্বারা কংগ্রেসের অনুগ্রহপৃষ্ঠ একশ্রেণীর কায়েমী স্বার্থের লোককে কর্পোরেশনে আনার সুবিধা হইবে।
শ্রীনরেন সেন (কং) বলেন যে, সার্বজনীন বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান তিনি সমর্থন করেন না। অন্তত ২।৩ বৎসরকালে কলিকাতার বাসিন্দা নহে এরূপ ব্যক্তিকে ভোটাধিকার দান করা ঠিক হইবে বলিয়া তিনি মনে করেন না। নির্বাচন পরিচালন যন্ত্রের উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ চালু করিবার যৌক্তিকতাও তিনি বিবৃত করেন।
ডাঃ হীরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী (কম্যু) বলেন যে লোকের কাছে বাহবা পাইবার জন্যই কংগ্রেসী সদস্যরা বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন সমর্থন করিতেছেন। কিন্তু তাঁহারা যে ভাষায় ঐ সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করিতেছেন তাহাতে উহা আসলে যে তাঁহারা চাহেন না তাহাই বোঝা যায়।
শ্রীবিজয় সিং নাহার (কং) বলেন যে, ১৯৬১ সালের মধ্যে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবি তোলা একটা রাজনৈতিক চাল ছাড়া আর কিছুই নহে। কারণ তাঁহারা ইহা ভালবাবেই জানেন যে, বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করিতে গেলে ১৯৬১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠান আদৌ সম্ভব হইবে না।
শ্রীসুনীল দাস (প্রঃ সোঃ) বলেন, অবিলম্বে মিউনিসিপ্যাল আইনের সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।
শ্রীতারাপদ চৌধুরী (কং) বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সমর্থন করিয়া বলেন যে, উহার জন্য যদি নির্বাচন পিছাইতে হয় তাহা হইলে উহা পিছাইয়া দেওয়া হউক।
শ্রীজাহাঙ্গীর কবীর (কং) বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সমর্থন করেন।
স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী শ্রীঈশ্বরদাস জালান বলেন যে, ইহা শুধু কলিকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রশ্ন নহে। কলিকাতা কর্পোরেশন এবং হাওড়া পৌরসভা সহ ২৫টি পৌরসভার নির্বাচনের প্রশ্ন। সুতরাং কি হইবে না হইবে এখনই উহা তাঁহার পক্ষে বলা সম্ভব নহে। যদি এখনও বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত লওয়া হয় তাহা হইলে আগামী বৎসরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা আদৌ সম্ভব হইবে না।
শ্রীমতী মণিকুন্তলা সেন (কম্যু) বলেন যে, সরকার পক্ষের দুইতিনজন সদস্যও যে বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান সমর্থন করিলেও ইহাতে তিনি খুশি হইয়াছেন। বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে পৌরসভাগুলির পরিচালন ব্যবস্থা উন্নততর হইবে বলিয়া তাঁহারা মনে করেন।
|
|