|
|
কলিকাতায় পশ্চিমবঙ্গ হস্তশিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন
(স্টাফ রিপোর্টার)
|
|
|
|
তার মাথায় টকটকে লাল ঘোমটা। মুখে অজস্র বলিরেখা। রঙ উজ্জ্বল তামাটে। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ঘরে ভীর। তবু তার মুখে চোখ পড়বেই। আর একবার যে দেখবে সে আর ভুলতে পারবে না। হঠাৎ নজরে মনে হবে সে মুখ বুঝি রঙ তুলিতেই আঁকা।
আমারও প্রথম তাই মনে হয়েছিল। ভ্রম হয়েছিল। খুঁটিয়ে দেখে ভুল ভাঙল। রঙ তুলির পেইন্টিং নয়, বরং বলা উচিৎ সূচের ফোঁড়ের পেইন্টিং। পেইন্টিং কি সূচের ফোঁড়ে করা যায়? এ প্রশ্ন যিনি তুলবেন, তাঁকে অনুগ্রহ করে একবার আসতে বলি, ৪২ নং গণেশচন্দ্র এভিনিউয়ে, তিনতলায় ষষ্ঠ নিখিল ভারত হস্তশিল্প সপ্তাহের প্রদর্শনী কক্ষে।
আশ্চর্য সুন্দর এই বৃদ্ধার পোট্রেটখানা। বলিরেখা জানিয়ে দেয় এ মুখ যার, তার বয়স হয়েছে। কিন্তু মুখের সতেজ জীবন্তভাব বলে দেয় যে “এখনও বেশ শক্ত সমর্থ।” পোট্রেটটি এসেছে দার্জিলিঙ থেকে। শিল্পীর নাম শ্রীমতী আভা শেঠ।
শুধুই দার্জিলিং থেকে নয়, বোধ করি মালদহ আর পঃ দিনাজপুর ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আর সব জেলা থেকে নানা শিল্প দ্রব্য এসেছে এই প্রদর্শনীতে। বাঁকুড়া থেকে এসেছে বিষ্ণুপুরী শাড়ি, পোড়া মাটির পুতুল, ঢোকরা ধাতুর জিনিস, শঙ্খের কাজের নানা সামগ্রী। এসেছে বর্ধমানের কাঠপুতুল, কাঁসা পিতলের দ্রব্য, খেলনা, মাদুর, শীতল পাটি, বীরভূমের পটারি, গালার কাজ, চামড়ার কাজ, বাটিকের কাজ, মুর্শিদাবাদের বালাপোষ, হাতির দাঁতের কাজ, খাগড়ার কাঁসার বাসন, সিল্কের ছাপা শাড়ি, জলপাইগুড়ির বেতের কাজ, বাঁশের কাজ, মেদিনীপুরের সিঙের কাজ, নদীয়ার শোলার পুতুল, মাটির পুতুল, ২৪ পরগণার নারকেল মালার সৌখীন দ্রব্য, শঙ্খ, ঝিনুকের জিনিস, তালপাতার সামগ্রী, হাওড়ার দড়ির জিনিস, পোলো খেলার বল। পোলো খেলার বল হাওড়া জেলার দেউলপুর আর বাগনান ছাড়া সারা বিশ্বে আর কোথাও তৈরি হয় না। |
|
|
সোলার রঙিন পুতুল। ফটো— আনন্দবাজার |
মনোহারি অথচ দরকারী সব রকম জিনিসের চাহিদা হস্তশিল্প যেমনভাবে মেটাতে পারে, তেমন আর কোন শিল্প নয়। আমাদের দেশের এটা বনেদী শিল্প। লক্ষ লক্ষ লোকের জীবিকা হস্তশিল্পের উপর নিভর্রশীল। বিভিন্ন বক্তা এইদিন ষষ্ঠ হস্তশিল্প সপ্তাহের উদ্বোধন উপলক্ষে এই মর্মে মন্তব্য করলেন। আরও বললেন যে, সম্প্রতি নানা সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মৃতপ্রায় শিল্পের পুনর্জীবন ঘটানো হইতেছে। এই শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা দেশ ও বিদেশে বাড়িতেছে। এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের মান ও উৎকর্ষের পরিচয় দেশের লোকের সামনে তুলে ধরা।
তাহলে এমন একটা প্রদর্শনী এই স্বল্প পরিসরে না করে, কোন পার্কে করলেন না কেন? জনৈক দায়িত্বশীল অফিসার সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে দুঃখের সঙ্গে জানালেন, এবারের প্রদর্শনী তাঁরা রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে অনুষ্ঠান করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কলিকাতা কর্পোরেশনের অনুমতি পাওয়া যায়নি।
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের উপমন্ত্রী শ্রীকাসেম আলি মীর্জা এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধন করেন শ্রীমতী রুণা মুখার্জি। নিখিল ভারত হস্তশিল্প বোর্ডের ভাইস চোয়ারম্যান শ্রীমতী শিব রাও বক্তৃতা করেন।
শ্রীগোপেন রায়ের আঁকা প্রাচীর চিত্রটি দর্শকদের মনোহরণ করে।
|
ফিরে দেখা... |
|