৫ পৌষ ১৪১৮ বুধবার ২১ ডিসেম্বর ২০১১





গাগারিন সংবর্ধনার ব্যয় বরাদ্দ লইয়া মতভেদ
কলিকাতা পৌরসভা: দশ হাজার, না বিশ হাজার?




হাকাশচারী মেজর য়ুরি গাগারিন সম্বর্ধনার জন্য কত টাকা খরচ করা হইবে,দশ হাজার না বিশ হাজারের কাছাকাছি? এই প্রশ্নে শুক্রবার কলিকাতা কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক অধিবেশনে ইউ-সি-সি দলের সদস্যদের মধ্যেও তীব্র মতভেদ দেখা দেয়।

ঐ দলের একপক্ষের মতে পয়সার অভাবে যে কর্পোরেশন ‘ঝাড়ু’ পর্যন্ত কিনিতে পারে না, তাহার পক্ষে বিশ হাজার টাকা করিয়া কাহাকেও সম্বর্ধনা জানানোর প্রয়াস দুঃসাহস মাত্র। একই দলের কয়েকজন কম্যুনিস্ট সদস্য মেজর গাগারিনের সংবর্ধনার জন্য যে কোন পরিমান টাকা খরচের পক্ষেই অভিমত দেন।

ইউ সি সির অ-কম্যুনিস্ট সদস্যদের মতে মেজর গাগারিন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁহাকে সম্বর্ধনা জানানোর ব্যাপারে কাহারও আপত্তি থাকিতে পারে না। কিন্তু তাই বলিয়া কর্পোরেশন করদাতাদের টাকা লইয়া ‘ছিনিমিনি’ খেলিতেও পারে না। মেয়র অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ করিবার পক্ষপাতী বলিয়া এই পক্ষ তাঁহার তীব্র সমালোচনা করেন।

ইউ সি সি’র কম্যুনিস্ট কাউন্সিলারদের মতে নাগরিকদের মেজর গাগারিনকে দেখার সুযোগ করিয়া দেওয়া কর্পোরেশনের কর্তব্য। এই কাজে অগ্রসর হইয়াছেন বলিয়া তাঁহারা মেয়রকে অভিনন্দন জানান।

গত সপ্তাহে কর্পোরেশনের সভার মেজর গাগারিনের সম্বর্ধনার জন্য দশ হাজার বরাদ্দ করা হইয়াছিল। কিন্তু এইদিনের সভায় মেয়র দশ হাজারের জায়গায় ১৯,৭৫০ টাকা খরচ করিতে চান। ফলে এই দিনের অধিবেশনে এক ঘন্টা ধরিয়া কথার ঝড় বহিয়া যায়।

সভার প্রারম্ভেই মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার মেজর গাগারিনের সম্বর্ধনার উল্লেখ করিয়া বলেন, এখন দেখা যাইতেছে দশ হাজার টাকায় খরচ কুলান যাইবে না। উনিশ হাজারের কিছু বেশী দরকার। আগামী সোমবার বিকাল তিনটায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মেজর গাগারিনকে নাগরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের আয়োজন করা হইয়াছে।

মেয়রের মুখের কথা শেষ না হইতেই ইউ সি সি দলের শ্রীবরেন দাঁ প্রশ্ন করেন, এত টাকা কেন? ইহার পর একে একে কংগ্রেস, নাগরিক কল্যাণ ব্লক, স্বতন্ত্র এবং ইউ সি সি দলের বহু সদস্য দশ হাজার টাকার বেশী খরচ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

ইহার উত্তরে মেয়র বলেন, রাজ্য সরকারের নিকট হইতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার স্থানটি পাইলেও চেয়ার, পোস্ট, বাঁশ, বেরিকেড, লাউডস্পীকারের ইত্যাদির জন্য ঠিকাদারকে টাকা দিতে হইবে। শুধু মাত্র ছয় হাজার চেয়ার ও বেরিকেড ইত্যাদির জন্য নয় হাজার টাকা এবং লাউডস্পীকারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিতে হইবে। ঠিকাদারকে কম টাকা দেওয়ার টেষ্টা করিয়াও বিশেষ সুবিধা হয় নাই।

কয়েকজন সদস্য সম্বর্ধনা বাবদ মোট ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশ টাকা সরকারের নিকট হইতে আদায়ের দাবি তুলিলে মেয়র জানান, এই ব্যাপারে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন। তবে এখন প্রস্তাব অনুযায়ী তাঁহাকে প্রয়োজনীয় টাকা খরচের ক্ষমতা দেওয়া হউক।

কংগ্রেস দলের দুইজন নেতৃস্থানীয় সদস্য মেয়রের পক্ষ লইলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঘুরিয়া যায়। পুরা এক ঘন্টা ধরিয়া কথা কাটাকাটির পর অবশেষে সকলেই মহাকাশচারীর সম্বর্ধনার জন্য প্রায় বিশ হাজার টাকা খরচের প্রস্তাবে রাজি হন। তবে খরচ যথাসাধ্য কম করার চেষ্টা করিবেন বলিয়া মেয়র তাঁহাকে আশ্বাস দেন।

এই মন কষাকষির ফাঁকে একজন কংগ্রেসী সদস্য কিন্তু মেজর গাগারিনের সম্বর্ধনার জন্য কাউন্সিলার ও অল্ডারম্যানদের নিকট হইতে একশত টাকা করিয়া চাঁদা তুলিবার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য দশ হাজার টাকার বেশী খরচ হইলে তাহা কর্পোরেশনের সদস্যদের দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য মিছিমিছি করদাতাদের টাকা খরচ করার মানে হয় না।

তাঁহার প্রস্তাবে কিন্তু কেহই উচ্চবাচা করেন নাই। একজন ত মুখ ফুটিয়া বলিয়াই ফেলেন, মেয়র মহাশয়, আমার অত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নাই।

এইদিন সভায় বিজয়কৃষ্ণ সিংহরায়, সুবোধচন্দ্র রায় শ্রীশচন্দ্র (হাবুল) সরকার এবং যতীন্দ্রনাথ সরকারের, মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করা হয়। তারপর সভা বুধবার পর্যন্ত মুলতুবী ঘোষণা করা হয়।




Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.