৫ পৌষ ১৪১৮ বুধবার ২১ ডিসেম্বর ২০১১





আবর্জনা অপসারণে নাগরিক উদ্যোগ




রামনাথ কবিরাজ লেন, ঠাকুরদাস পালিত লেন, বাঞ্ছারাম অক্রুর লেন, পঞ্চাননতলা লেন, মল্লিক ডিসপেন্সারী লেন, কৃষ্ণ লাহা লেন তথা ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের তাবৎ লেন, বাই-লেন এবং স্ট্রীট, রোডবাসী নাগরিকেরা সাবাস! বিশেষ করে কলকাতার হয়ে সাবাস জানাচ্ছি রামকমল সেন লেনের “কিশোর পরিষদের” তরুণবৃন্দকে। কেননা গত ক’দিন তাঁরা যা দেখিয়েছেন কলকাতার সত্যিই অনেকদিন তা দেখেনি।

ইঁটের উপর ইঁট সাজিয়ে গলির ভেতরে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা নয়, খাতা-কলম হাতে নিয়ে বাড়ী বাড়ী চাঁদা-সাধা নয়, সংস্কৃতিসম্মেলন তথা জলসার নামে এবাড়ি থেকে ওবাড়ি বেঞ্চি টানা-টানিও নয়,-- কলকাতা-৭য়ের তরুণেরা সেদিন গলিতে নেমেছিলেন ঝাঁটা হাতে। কেননা, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি তরুণ গলির মোড়ে জঞ্জালের পাহাড়টির দিকে আঙুল তুলে বললেন,--“নয়তো, এপাড়ায় আর মানুষ থাকতে পারতো নাশহরের ইজ্জত থাকতো না!”

লক্ষণটা ধরা পড়েছিল গেল সপ্তাহের গোড়ায়। এবং প্রথমত বড়বাজার এলাকায়। অর্থাৎ, দু’নম্বর জেলায়।

রাস্তা ক্রমশ অপরিচ্ছন্ন ঠেকছে। বাড়ির সামনে জঞ্জাল ক্রমেই যেন বাড়ছে,--ডাস্টবিন উপছে পড়ছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কোথায় যেন কি গোলমাল হয়েছে। অথচ কোথায় বা কেন তা সহসা বোঝবার উপায় নেই। কেননা, প্রতিদিনের মতই বড় রাস্তায় ঝাড়ুদার জমাদারদের দেখা যাচ্ছে।

কারণটা যখন জানা গেল গলিতে গলিতে তখন স্তুপীকৃত জঞ্জাল, জানালা দরজা বেয়ে ঘরে ঘরে দুর্গন্ধ। শোনা গেল, এদুর্গন্ধের হেতু স্ট্রাইক নয়, ধীরে চল নীতি নয়, সুরেন ব্যানার্জী রোডের লালবাড়ীতে হঠৎ কোন অঘটনও নয়, পাড়ায় পাড়ায় জঞ্জালের পাহাড় গড়ে উঠছে কারণ, জঞ্জাল যারা সাফ করে সেইঝাড়ুদার-জমাদারদের কেউ কেউ ছুটিতে আছে!

রামকবল সেন লেনের তরুণেরা রাস্তার জঞ্জাল সাফ করিতেছেন।

জনৈক কাউন্সিলার ব্যঙ্গের হাসি হাসলেন। বললেন“কত জন ছুটি নিয়েছিল জানেন? ওঁরা বলেন মাত্র পাঁচ জন!” পাঁচ না হয়ে সংখ্যাটা পাঁচশ হলেও আপত্তির কিছু ছিল না। কেননা, কর্পোরেশনের জঞ্জাল-সাফাই বাহিনীতে লোক আছে (“ভূত” সমেত) বারো থেকে তের হাজার। তার উপর আট হাজার ঝাড়ুদার। সাড়ে তিনশ লরীতে দিনে প্রায় তিন হাজার টন (দু’হাজার টনের হিসেবটা ১৯৩৮ সনের!) জঞ্জাল অপসারণ করে তারা শহর কলকাতার বুক থেকে। সুতরাং বছরের কোন না কোন সময়ে এই বিড়াট কর্মী বাহিনীর কিছু না কিছু ত ছুটি নেবেই। তাই বলে কি কলকাতা আবর্জনা-স্তুপে পরিণত হবে!

“কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আরও একটা অজুহাত দিয়েছিলেন অবশ্য, তাঁরা বলেছিলেন সাত ভাগের এক ভাগ লরীও নাকি কাজ করছে না!” আর একজন ওয়াকিবহাল কাউন্সিলার দৃঢ়স্বরে বললেন“আমি সে কথা বিশ্বাস করি না! আসল বাপার কি জানেন?— সেই পঞ্চাশ নয়া পয়সার মামলা!”


এই মামলাটা আজ সর্বজনবিদিত। কর্পোরেশনের জঞ্জাল-সাফাই বিভাগের কর্মীদের মাসিক মাইনে ৫৯ টাকা। সেই হিসাবে একজন কর্মীর দৈনিক মজুরী দাঁড়ায় ২.৩০ নয়া পয়সা। কিন্তু ছুটুর দিনে একজনের জায়গায় সাময়িক কর্মী হিসেবে যখন অন্যজনকে নেওয়া হয় তখন মজুরি বরাদ্দ ১.৮০ নয়া পয়সা। লোকেরা তাতে রাজি নয়। নয় বলেই পাঁচজন (!) কর্মীর ছুটিতে পঞ্চাশটি রাস্তা দেখতে দেখতে জঞ্জালে ছেয়ে গেল। বাসিন্দারা প্রমাদ গুনলেন। অসহায়ের মত তাঁরা দেখলেনপাড়ার বাতাস যখন দুর্গন্ধে বিষাক্ত, পথচারীরা অতিষ্ঠ, কর্পোরেশন তখন সভা করছে,--সেখানে তর্ক হচ্ছে!

“বাধ্য হয়েই হাত লাগাতে হল আমাদের!” কিশোর সংঘের একজন মুখোপাত্র বললেন, “নয়ত, এই ক’দিনে এসব রাস্তাগুলোর কি দশা হত বোধ হয় ভাবতে পারছেন!” সে কথা ভাবতে পারছি বলেই গলিবাসী যুবকদের“সা বা স”।

“২২শে থেকে ২৫শে নবেম্বর গলিতে গলিতে ওরা যদি হাত না লাগাত তা হলে বোধ হয় এতদিনে এ এলাকায় মহামারীই লেগে যেত!”রামকমল সেন লেনের এক বৃদ্ধ কবুল করলেন। তারপপর কলেজের ছাত্র সেই তরুণটির পিঠে হাত রেখে বললেন“সাবাস!”

কথা আছে, আজ (মঙ্গলবার) থেকে সাত শ’ নতুন লোক কাজে নামবে। যদি নামে তাহলে এ-তরুণকে হয়ত আর হাতে ঝাঁটা ধরতে হবে না। কিন্তু আশা রাখি, এই ‘সাবাস’টা তার কানে অনেক কাল থাকবে, বিপদের দিনে থেকে থেকে কানে বাজবে।


Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.