|
অতীত দিনের দিকপালফুটবল খেলোয়াড় হাবুল সরকার আর ইহজগতে নাই। ১৯১১ সালের আই এফ এ শীল্ড বিজয়ী মোহনবাগান ক্লাবের রাইট ইন হাবুল সরকার মঙ্গলবার ভোর ৪টার সময় ৮৭ নম্বর কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রীটের রাসভবনে অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হইয়া পরলোকগমন করিয়াছেন। মৃত্যুকালে তাঁহার ৭৫ বৎসর বয়স হইয়াছিল। তিনি অকৃতদার ছিলেন।
হাবুল সরকারের মৃত্যুসংবাদ পাইয়া বহুখেলোয়াড় ও ক্রীড়া পরিচালক তাঁহার বাসভবনে অথবা শ্মশানঘাটে যাইয়া মৃতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।মোহনবাগান ক্লাব, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, এরিয়ান ক্লাব, ভবানীপুর ক্লাব, গ্রীরার ক্লাব, ভেটারেন্স ক্লাব, প্লে।য়ারস এসোসিয়েশন, ঝামাপুকুর অ্যাথলেটিক, স্টার স্পোর্টিং, ইয়ং মেনস এসোসিয়েশন, ব্রাহ্ম বয়েজ, হৃষীকেশ পার্ক স্কুল প্রভৃতি বহু ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে হাবুল সরকারের মরদেহে পুষ্পমাল্য এবং পুষ্পবলয় অর্পণ করা হয়।
যাঁহারা হাবুল বাবুর বাড়িতে অথবা শ্মশানঘাটে খ্যাতকীর্তি খেলোয়াড়কে শেষ দর্শনের জন্য যান তাঁহাদের মধ্যে স্বনামধন্য গোষ্ঠ পাল, ইউ কুমার, এস মান্না, অধ্যাপক পি কে রায়, প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।
শোকযাত্রা সহকারে নিমতলা মহাশ্মশানে লইয়া হাবুল সরকারের মরদেহ সৎকার করা হয়।
কেবল ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেই হাবুল সরকারের সুনাম ছিল না। হকি এবং ক্রিকেটেও তিনি প্রায় সমান দক্ষ ছিলেন। খেলার মাঠই ছিল তাঁর যৌবন ও বার্দ্ধক্যের উপবন। সদালাপী ও নিরহঙ্কার ‘হাবুলদা’ ছিলেন ময়দানে সকলের প্রিয়। হাবুলদার মৃত্যুতে আজ তিন মাস পূর্বের একটি ঘটনা মনে পড়িতেছে। ‘আনন্দবাজার পত্রিকায়’ স্বাধীনতা উৎসবের বিশেষ ক্রোড়পত্রে হাবুল বাবুর ক্রীড়াজীবনের কথা প্রকাশ করিবার জন্য যখন তাঁহার বাড়িতে গিয়াছিলাম তখন তিনি যাহা বলিয়াছিলেন তাহা হাবুল বাবুর নিজের মুখেই শোনা যাক—
“হাবুল সরকার হিসাবে আমি পরিচিত হলেও আমার আসল নাম শ্রীশচন্দ্র সরকার। সিটি কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময়ে মার্কাস স্কোয়ারে আমার ফুটবলের হাতেখড়ি। ১৯০৬ সালে ন্যাশন্যাল থেকে মোহনবাগানে খেলতে এসে পর পর তিন বছর ‘ট্রেডস কাপ’ জিততে মোহনবাগানকে আমি সাহায্য করি। ১৯০৮ পাঁচ দিন গর্ডন হাইল্যান্ডার্সের সঙ্গে ড্র করে মোহনবাগানের ‘লক্ষীবিলাস কাপ’ ঘরে তোলার পথে আমার সাহায্য ছিল সামান্য। ১৯১১ সালে ইস্ট ইয়র্ককে ফাইনালে হারিয়ে মোহনবাগানের ঐতিহাসিক শীল্ড বিজয়ী দলে আমি ছিলাম একাদশ সেনানীর অন্যতম। ১৯১২ ও ১৯১৫ সালে প্রতিনিধিত্বমূলক ভারতীয় দলে লেফট হাফ হিসাবে খেলেছি। লেফট হাফ ছাড়া সেন্টার হাফ ও ইনসাইড হিসাবেও প্রয়োজন মত খেলতে কোন কষ্ট হয়নি কখনো।
ফুটবল আমার প্রিয় খেলা বটে, তবু ক্রিকেট বা হকিতেও আমার তখন নাম-ডাক কম ছিল না। ক্রিকেটে সিটি স্পোর্টিং ইউনিয়ন, টাউন ক্লাব ঘুরে মোহনবাগানের ক্রিকেট দলের অধিনায়কের বোঝা বহন করতে হয়েছে আমাকে বেশ কয়েক বছর। ১৯১৬ সালে প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে গ্রীয়ার ক্লাব প্রথম ডিভিসন হকি লীগে চ্যাম্পিয়ানশিপ লাভ করে। সে দলে খেলবার সুযোগ হয়েছিলো আমার। মোহনবাগানে হকি খেলতে যে বছরে এলাম সেইবারেই মোহনবাগান দ্বিতীয় বিভাগের বেড়া ডিঙ্গিয়ে প্রথম বিভাগে ঢুকে পড়ল। এর পর হকি খেলা ছেড়ে দিলেও ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেতেছিলাম আরও কয়েক বছর।”
হাবুল বাবুর মৃত্যু সংবাদ পাইয়া মোহনবাগান ক্লাব পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। পরলোকগত দিকপাল খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তিন দিন ক্লাব পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এই তিন দিন ক্লাব তাঁবুতে কোন কাজকর্মও হইবে না।
পুলিসের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে মঙ্গলবার লেক স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের সহিত পুলিস দলের এক প্রদর্শনী খেলার কথা ছিল। কিন্তু হাবুল সরকারের মৃত্যুর জন্য খেলাটি স্থগিত হইয়া যায়। |
|