|
পশ্চিমবঙ্গের পুলিসবাহিনী রবিবার বিকালে দক্ষিণ কলকাতার “রবীন্দ্র সরোবর” স্টেডিয়ামে ভারতীয় পুলিস শতবার্ষিকী উৎসব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণতম প্রাক্তন পুলিস কর্মচারী, শ্রীমঙ্গলবীর নেওয়ার (৯৫) এইদিন পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ইহাতে সভাপতিত্ব করেন রাজ্যের পুলিসমন্ত্রী শ্রীকালীপদ মুখোপাধ্যায়।
সুসজ্জিত বৃহৎ “রবীন্দ্র সরোবর” স্টেডিয়ামে ঐ উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যবস্থা পাকা ছিল। কিন্তু স্থান যত ছিল, তত দর্শক ছিল না। বিশিষ্ট অতিথিদের আসনগুলিতে ভীড়, প্রায় শূন্য ছিল সাধারণ দর্শকের আসনগুলি।
একশত বছর আগে ১৮৬১ সালের যে ৫নং আইনে ভারতের পুলিসবাহিনী সংগঠিত হইয়াছিল এবং আজও যে আইনের ভিত্তিতে তাঁহাদের কাজ চলিতেছে উহারই শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশ জুড়িয়া উৎসবের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ঐ আইনের আওতায় পড়ে না বলিয়া এই যজ্ঞে কলিকাতার পুলিস আহুতি দিতে আসে নাই। কলিকাতা পুলিসের যে সকল কর্তাব্যক্তির মুখ এইদিন উৎসবের প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, তাঁহারা ছিলেন নিমন্ত্রিত অতিথি।
যথাসময়ে বিভিন্ন জেলার এবং নানা বাহিনীর পুলিস কর্মচারীদের কুচকাওয়াজের দ্বারা অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুলিসমন্ত্রী তাঁহাদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। পুলিসবাহিনীর ইতিহাস এবং কার্যকলাপের বিবরণ সহ ইংরাজী ভাষায় রচিত পুস্তিকা অতিথিদের বিতরণ করা হয়। পুলিসমন্ত্রী এবং আই জি তাঁহাদের বক্তৃতা অবশ্য বাংলাতেই দেন।
প্রায় পৌণে এক ঘন্টার অনুষ্ঠানের শেষে আকাশে ১০০টি রঙীন গ্যাস ফানুস উড়াইয়া দেওয়া হয়। লাল-নীল ‘রকেট’ ছোড়া হয়। পুলিস ব্যান্ড বাজিয়া উঠে।
সভাপতি পুলিসমন্ত্রী শ্রীমুখোপাধ্যায় রাজ্যের পুলিস কর্মচারীদের কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান “অগ্রগামী সেনা” হইবার জন্য আবেদন জানাইয়া বলেন যে, তাঁহারা যেন আর্ত দুর্গত জনসাধারণের সাহায্যের জন্য “বন্ধুর হস্ত সম্প্রসারিত” করেন।
তিনি বলেন, একটা প্রশ্ন উঠিয়াছেপুলিসবাহিনীর শতবর্ষ উপলক্ষে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। তাঁহাদের মতে এই উৎসবের সার্থকতা আছে। নিজেদের সাম্রাজ্য চালাইবার প্রয়োজনে সেকালের বৃটিশ রাজশক্তি ভারতের পুলিসবাহিনীর পত্তন করিয়াছিল এবং রাষ্ট্রশক্তির “যন্ত্র হিসাবে” পুলিসবাহিনীকে ব্যবহারও করিয়াছিল। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিকদের “নিষ্পেষণ ও নির্যাতনের অস্ত্র হিসাবেও” পুলিসকে ব্যবহার করা হইয়াছিল তাহা অস্বীকার করার উপায় নাই।
কিন্তু তাঁহার মতে ১৯৪৭ সালের পর হইতেই যেন কোন “ইন্দ্রজাল শক্তি’’র বলে সেই পুলিসবাহিনীর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়াছে। তাহা সত্ত্বেও যদি পুলিসবাহিনীর মধ্যে দোষত্রুটি দেখা যায় তাহা সমগ্র সমাজেরই “দোষ-ত্রুটির প্রতিফলন”।
শ্রী মুখোপাধ্যায় আরো বলেন, আজ পুলিস কর্মচারীদের সামনে যে নূতন আদর্শ দেখা দিয়াছে তাহা “জনসেবার আদর্শ”। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজে পুলিস কর্মচারীদের আত্মনিয়োগ করিতে হইবে।
শ্রী নেওয়ার বলেন, আজকের পুলিস কর্মীরা দেশ-সেবার যে সুযোগ পাইতেছেন তাঁহাদের আমলে সে সুযোগ ছিল না।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের ইন্সপেক্টর জেনারেল শ্রীহরিসাধন ঘোষচৌধুরী সকলকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি বলেন, কিছু কিছু অসুবিধার জন্য ভারতের অন্যান্য স্থানের সহিত গত অক্টোবর মাসে পশ্চিমবঙ্গের এই উৎসব করা সম্ভব হয় নাই।
ঐদিন দ্বিপ্রহরে এবং বিকালে পুলিসবাহিনীর কর্মীরা খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করেন। কৃতী খেলোয়াড়দের পুরস্কার দেওয়া হয়।
|
|