নতুন সুপার এসেছেন মাস পাঁচেক। এলাকাবাসীর দাবি, তার পরেই হাসপাতালের ভোল বদলে গিয়েছে। চালু হয়েছে বন্ধ বিভাগ। বেড়েছে শয্যা। মাসখানেক আগে সেই ডাক্তারের বদলির নির্দেশ এসেছে বলে জানাজানি হতেই প্রতিবাদ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার মালদহের চাঁচল হাসপাতালের সুপার সুবর্ণ গোস্বামীর বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল ‘চাঁচল নাগরিক মঞ্চ’। দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির ছিলেন রাজনৈতিক নেতারা।
|
সুবর্ণ গোস্বামী। |
চাঁচলের সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, “মঞ্চের দাবি ও আন্দোলনের কথা জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “মানুষ এক জন ডাক্তারকে ভাল বলছেন, এটা ভাল কথা। তবে ওই ডাক্তারের পদোন্নতি হচ্ছিল। উনি চাইলে পুরনো কর্মস্থলে থাকতে পারেন। চাইলে পদোন্নতি নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন।”
কর্মজীবনে দীর্ঘসময় বীরভূমে কাটিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণবাবু। গত সেপ্টেম্বরে চাঁচল মহকুমা হাসপাতালের সুপার পদে যোগ দেন তিনি। তার পর থেকেই হাসপাতালের হাল ফেরে বলে দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুবর্ণবাবুর উদ্যোগে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫৫ থেকে বেড়ে হয় ৮৫। চিকিৎসকের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয় নয়। চালু হয় অস্ত্রোপচার করে প্রসবের ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। |
বিপিএল-দের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার অনুমোদন মেলে। ১ মার্চ থেকে হাসপাতালে চালু হবে রোগী সহায়তা কেন্দ্র। অনুমোদন মিলেছে চার শয্যার মর্গেরও। অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ চালু হয়েছে, যা মালদহ মেডিক্যাল ছাড়া জেলার অন্যত্র নেই। হাসপাতালটিকে মাল্টি-সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরে উন্নীত করার প্রকল্পের শিলান্যাসও হয়ে গিয়েছে।
জানুয়ারি মাসে সুপারের বদলির নির্দেশ এসেছে বলে জানাজানি হতেই ‘নাগরিক মঞ্চ’ আসরে নামে। ওই মাসের শেষেই তারা বদলির সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবিতে সই সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠায়। তাতে কাজ না হওয়ায় দিন পনেরো আগে তারা চাঁচলের সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘেরাও করে। এ দিন বেলা ১০টা থেকে চাঁচলে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও আশাপুরগামী রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়।
মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক কংগ্রেস নেতা দেবব্রত ভোজ এবং সিপিএম নেতা মনওয়ারুল আলম বলেন, “ওই সুপার ভাল ডাক্তার, দক্ষ প্রশাসক। তাঁর উদ্যোগেই এখানে অনেক কাজ হয়েছে। এমন এক জন মানুষের বদলি আটকানো না হলে পরবর্তী কালে বন্ধ-সহ বড় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।” ব্লক তৃণমূল সভাপতি মজিবুর রহমান এবং বিজেপি-র চাঁচল অঞ্চল কমিটির সভাপতি সীতারাম সাহাও অবরোধে সামিল হন। অবরোধের জেরে ব্যাপক যানজট হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে দুপুর ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুব্রত বর্মন বলেন, “এলাকাবাসীর দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আর্জি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।”
বদলি রুখে ‘ভাল ডাক্তার’কে এলাকার হাসপাতালে রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলন আগেও দেখেছেন রাজ্যবাসী। ১৯৯৪ সালে তারাপীঠের তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসককে রাজনীতি করে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ ও স্বাস্থ্য-কর্তাদের ঘেরাও করেন। অ্যাম্বুল্যান্স পোড়ানো হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগুন লাগানো হয়। পুলিশ গুলি চালায়। তিন জন মারা যান। বদলি আটকে যায় ওই চিকিৎসকের। বছর দু’য়েক আগে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসকের বদলির প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন এলাকার পুরুষ-মহিলারা। বছরখানেক আগে এক চিকিৎসকের বদলি রদের দাবিতে বাঁকুড়ার গৌরীপুর কুষ্ঠ হাসপাতালের শতাধিক রোগী অনশন করেন।
তাঁকে রেখে দেওয়ার দাবিতে এ ভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠায় ‘কৃতজ্ঞ’ সুপার সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁর কথায়, “স্থানীয় মানুষ যে সম্মান দিয়েছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। সরকারি কর্মী হিসেবে যেখানে পাঠানো হবে, যেতে বাধ্য। যেখানেই যাই, সাধারণ এবং গরিব বাসিন্দাদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে কাজ করব।” |