বর্জ্য-গ্রাসে রাস্তা/১
চুন-সুরকি, বোতল-টায়ারের স্তূপে সরু হচ্ছে দিল্লি রোড
ক্ষীণ হয়ে আসছে দিল্লি রোড।
পিচের আস্তরণ হারিয়েছে অনেক দিন আগেই। অসংখ্য খানা-খন্দে বোঝাই স্বাস্থ্য হারানো সেই সড়ক এখন রুগ্ন চেহারা নিয়ে প্রস্থও হারিয়ে ফেলছে। কেন?
রাজ্য সড়ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আঙুলটা সরাসরি তুলছেন দিল্লি রোডের লাগোয়া পুরসভাগুলির দিকে।
ডানকুনি থেকে চুঁচুড়া, হুগলির জেলার বুক চিরে যাওয়া ওই সড়কের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে অন্তত ছ’টি পুর এলাকার বর্জ্য নির্বিচারে পড়ছে ওই সড়কের দু-ধারে। জমি থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতায় জাতীয় সড়ক বর্জ্যের ভিড়ে এখন সেই উচ্চতা হারিয়ে ফেলেছে। বুজে গিয়েছে রাস্তার দু-ধারের অধিকাংশ জলা। নিত্যকার আবর্জনা থেকে নির্মীমাণ বাড়ির চুন-সুড়কি, টায়ার, বোতল, ভাঙা টিন, এমনকী হাসপাতালের চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাওপরিচিত ওই রাজ্য সড়কের দু’ধারে এখন বর্জ্যের পাহাড়।
পুর-পরিবেশের প্রাথমিক শর্তগুলির তোয়াক্কা না করা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ওই এলাকাগুলি নিয়ে অবশ্য উচ্চাকাঙ্খী। হুগলির ওই ছ’টি পুর এলাকাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়ে বসেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। তাদের নয়া প্রস্তাব--গঙ্গার কোল থেকে দিল্লি রোড পর্যন্ত বিস্তৃত ওই এলাকার ছ’টি পুরসভা এবং বেশ কিছু পঞ্চায়ত এলাকা নিয়ে চন্দনগরের ধাঁচেই কর্পোরেশন গড়া হবে। এ ব্যাপারে হুগলি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে ইতিমধ্যেই সীমানা নির্ধারণের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি রোডের ধারে আবর্জনা। বৈদ্যবাটিতে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।
যা শুনে বিরোধীদের মন্তব্য: চচ্চড়ির উপকরণ দিয়ে বিরিয়ানি রাঁধতে চায় সরকার!
কটাক্ষটা অমূলক নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট নগর-রূপকার (টাউন প্লান্যার) হরিশ মনচন্দানি মনে করেন, “কতকগুলি নির্দিষ্ট শর্তের উপরেই কোনও এলাকার উন্নয়ন নির্ভর করে। কর্পোরেশনের স্ট্যাটাস পেতে গেলে সেই শর্তগুলি পূরণ করা আবশ্যক। জিটি রোড এবং দিল্লি রোডের মাঝে ওই পুরনো জনবসতিগুলিকে নিছকই জন-ঘনত্বের নিরিখে কর্পোরেশন-স্ট্যাটাস দিলে চলবে না। কর্পোরেশন হলে নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবাও দিতে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। এ ক্ষেত্রে যার প্রথম বাধা দিল্লি রোডের লাগোয়া বর্জ্যের স্তূপ।” তিনি মনে করেন, জিটি রোডের সম্প্রসারণ প্রায় ‘অসম্ভব’। তুলনায় অনক সহজ দিল্লি রোডের সম্প্রসারণ। তিনি বলেন, “কোনও কর্পোরেশন এলাকার অন্যতম শর্ত সুগম যোগাযোগো ব্যবস্থা। এই ছ’টি পুর এলাকা নিয়ে প্রস্তাবিত কর্পোরেশন এলাকার প্রাণরেখাও দিল্লি রোড। তার সম্প্রসারণ হলে এলাকার যাতায়াতের ছবিটাই বদলে যাবে। কিন্তু দিল্লি রোডের সম্প্রসারণ করতে গেলে প্রথমেই পুর বর্জ্য ফেলার জায়গাটা বদলাতে হবে।”
দিল্লি রোড সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্গন্ধ আর কঙ্কালসার রাস্তা দিয়ে চন্দননগর থেকে ডানকুনি, ওই পরিসরটুকু পার হওয়া এখন এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। গন্ধ দূষণের সঙ্গে ওই পুর-বর্জ্য প্রায়ই পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বায়ু দূষণের মাত্রাও। ডানকুনি এলাকার বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক সুবিনয় সরকার বলেন, “দুর্গন্ধের দাপট তো আছেই তার উপর মাঝে মধ্যেই বর্জ্য পুড়িয়ে দেওয়ায় যে ধোঁয়া হয় তার রেশ ছড়িয়ে থাকে কখনও বা দেড়-দু’দিন। সে সময়ে শ্বাসকষ্টে এলাকায় থাকাই দুষ্কর হয়ে ওঠে।”
স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংস্থা থেকে মানবাধিকার সংগঠন, এমনকী খোদ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ--একাধিক্রমে স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষগুলিকে সতর্ক করা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে সাড়া মেলেনি। উল্টে আবর্জনা ফেলার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে দায় এড়িয়েছে তারা। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে আসছি। ওই পুর কর্তাদের ডেকে অনেক বার বৈঠকও করা হয়েছে। কিন্তু খাতায় কলমে বর্জ না ফেলে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও তার প্রয়োগ আর হয়নি।” এ ব্যাপারে তাই হাইকোর্টের গ্রিন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে ওই সংগঠনগুলি।
পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের পৌর-বর্জ্য পরিশোধন আইনে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে, শুধু পুর এলাকাই নয়, পুরসভার বাইরেও ঘন বসতি রয়েছে এমন কোনও এলাকাতেই বর্জ্য ফেলা যাবে না। পুরসভাগুলিকে তাদের বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিতে হবে এবং তাকে পচিয়ে দ্রুত সার তৈরি করতে হবে। শুধু তাই নয়, পুর এলাকায় রাস্তার দু-পাশে আবর্জনা ফেলার ভ্যাট রাখার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল ওই আইনে। পরের বছর, ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টও ওই পুর-বর্জ্য আইনকেই সমর্থন করে রায় দেয়। তবে রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভাই সে নির্দেশের তোয়াক্কা করে না। হুগলির এই ছ’টি পুরসভার অধিকাংশের কাজকর্মই তারই প্রমাণ।
(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.