ভোট চলাকালীন দেশের সমস্ত লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকানের দৈনিক মদ বিক্রির ওঠানামার উপরে নজরদারি শুরু করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। কোথাও বিক্রির পরিমাণ প্রত্যাশিত হারের তুলনায় বেশি মনে তা সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে কমিশনকে। নইলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে দোকানের। কমিশনের এই অবস্থান নিয়ে রাজ্য সরকার এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এক তরফা ভাবে সিদ্ধান্ত চাপানোর জন্য প্রশাসনের কোনও কোনও পদস্থ কর্তা একান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রতি বছরই ভোটের সময়ে মদ বিক্রির উপর নজরদারি থাকে নির্বাচন কমিশনের। এ বার দৈনিক বিক্রির হিসেব দাবি করে আরও কড়া অবস্থান নিল কমিশন। নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি দোকানকে মার্চ মাসের গোড়া থেকে ভোটের গণনা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনের মদ বিক্রির হিসেব পরের দিন সকালের মধ্যে কমিশনকে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে, গত বছর ওই দিনে ওই দোকানে কী পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে সেই তথ্যও দিতে হবে। কোনও দিন যদি গত বছরের ওই দিনটির চেয়ে ৩০ শতাংশ কিংবা বেশি হারে মদ বিক্রি হয়, তা হলে সম্ভাব্য কারণ জানাতে হবে। কোনও মদের দোকান ওই নির্দেশ অমান্য করলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কমিশন।
রাজ্যের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গের সব জেলায় মদের দোকান মালিকদের জরুরি বৈঠকে ডেকে ওই নির্দেশনামা জানিয়ে দিয়েছে আবগারি দফতর। দার্জিলিংয়ের আবগারি দফতরের সুপার সুজিত দাস বলেন, “এমনিতেই আমরা ভোটের সময়ে নিয়মিত হিসেব কমিশনকে দাখিল করি। এবার বাড়তি হিসেবে দৈনিক বিক্রির হিসেব দিতে হবে।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত অতি স্পর্শকাতর ও স্পর্শকাতর এলাকায় মদ বিক্রির ওঠানামা দেখে আরও কড়া পদক্ষেপ করার পথে হাঁটতে পারে কমিশন। কোথাও আচমকা মদ বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে ওই এলাকাকে ‘স্পশর্কাতর’ হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্তও নিতে পারে।
তবে রাজ্যের আবগারি দফতরের শীর্ষ কর্তারা কেউই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগাম আলোচনা না করে এভাবে কমিশন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকেই মানতে পারেননি। রাজ্য প্রশাসনের প্রথম সারির একাধিক কর্তা বিষয়টিতে ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। মদের দোকান মালিকদের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কারণ, বিদেশি মদের অধিকাংশ দোকান নিয়ম মেনে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা বাধ্যতামূলক। তারপর সে দিনের হিসেব পরদিন সকাল আটটার মধ্যে জেলাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসারের দফতরে পৌঁছতে হবে। যাতে বেলা ১০টার মধ্যে সেখান থেকে রাজ্য আবগারি দফতরে পাঠানো যায় হিসেব। পানশালা-লাগোয়া মদের দোকানে রাত ১২টা পর্যন্ত বিক্রি চলে। ওই ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, মাঝরাত পর্যন্ত দোকান চালানোর পরে হিসেব তৈরি করে পাঠাতে ভোর হয়ে যাবে। গত বছরের সঙ্গে এ বছর মদ বিক্রির হিসেব মেলানোর নির্দেশেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন দোকান মালিকরা। গত বছর মার্চের চাইতে এ বছর কত শতাংশ বেশি বা কম বিক্রি হল, তার দিনভিত্তিক হিসেব রাখার জন্য আলাদা কর্মী নিয়োগ ছাড়া উপায় নেই, অভিযোগ করেন অনেকেই। |