শামিমার ব্যাটে ছক্কা হয়ে উড়ে গিয়েছে সংস্কার
সীমানা উজিয়ে শেয়ালকাঁটার ঝোপে বলটা পড়তেই পড়িমড়ি করে ছুটে যাবে সে। তারপর, “দেব না, দেব না!”
মাঠ থেকে অবধারিত উড়ে আসবে ধমক এবং মেয়েটি ইনিয়ে বিনিয়ে শুরু করবে, “খেলতে নে না দাদা, এক বার বল করতে দে না!”
বিকেলভর নাকি-কান্নাটা এক সময়ে ঝিমিয়ে এলেও মাঠের ধার থেকে নড়ত না মেয়েটা।
নাছোড় শামিমাকে এক দিন তাই ‘আয় দেখি, কেমন পারিস’, মাঠে টেনে নিয়েছিল তার দাদা আলমগির হোসেন। কব্জির মোচড়ে খান কতক বাউন্ডারি আর সটান একটা ছক্কা মেরে ছিপছিপে কিশোরী বুঝিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটটা সে মন্দ খেলে না।
শুরুটা হয়েছিল এ ভাবেই। তারপর, টিপ্পনি, রাঙা চোখ, নিষেধগত কয়েক বছরে সব গিয়ে আছড়ে পড়েছে সেই খোলা মাঠ শেয়ালকাঁটার ঝোপে।
ক্রিকেটের ময়দানে আরও অনেক শামিমা। ডোমকলে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
স্কুলের পাঁচিল ডিঙানো সেই ছক্কায় মুছে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের প্রান্তিক গ্রাম বিলাসপুরের সাবেক সংস্কার‘মেয়েদের আবার খেলতে আছে নাকি!’
সকালে স্কুলে যাওয়ার সময়ে যে ওড়নায় মাথা ঢাকে, শনি-রবিবারের বিকেলে সেই ওড়নাই কোমরে জড়িয়ে এখন প্র্যাক্টিসে চোস্ত হয়ে উঠেছে শামিমারা। প্রশাসনিক ভবনের ঘেরা মাঠের পাশ দিয়ে গেলে প্যাড-গ্লাভস-এ পুরদস্তুর ‘ঝুলন গোস্বামীদের’ দেখে হাঁ হয়ে যায় ডোমকল।
আলমগির এখন মধ্য বিশের যুবক। বলেন, “আমরা খেলতে নামলেই বোনটা পায়ে পায়ে হাজির হতো মাঠের ধারে। তারপর সারাক্ষণ বায়না, ‘দাদা খেলতে নে না!” বন্ধুদের বুঝিয়ে এক দিনই তাই রাজি করেছিল সেই দাদাই। আলমগিরের মনে পড়ে, “প্রথম দিনেই মাঠ মাতিয়ে দিয়েছিল শামিমা।” লাজুক লাজুক মুখে শামিমা বলছেন, “দাদা খেলতে না নিলে মাঠেই নামা হত না।”
গ্রামের হাইমাদ্রাসায় একটা কবাডির দল ছিল। শামিমা মাঠে নামতেই কবাডি ছেড়ে সেই খেলুড়েরাও এসে জুটেছিল মাঠে। শামিমা বলেন, “সবাইকে নিয়ে এক দিন তাই মাঠে নেমে পড়লাম। যা থাকে কপালে!” সেই সদ্য-কিশোরী এখন একুশ বছরের কলেজ পড়ুয়া। একা নয় সে। তার হাত ধরেই আশপাশের সেখালিপাড়া, হিতানপুর, ভাতশালার ‘শামিমা’রাও এখন ভিড় করেন মাঠে। প্যাড-গ্লাভস, ব্যাট-বলের পাশাপাশি জার্সিও জুটে গিয়েছে তাঁদের।
ডোমকলে একটিই মাঠ। ছেলেরা তা ছাড়বে কেন? মুশকিল আসানে এগিয়ে এসেছে প্রশাসন। কয়েক মাস ধরে ডোমকলের প্রশাসনিক মাঠের ঘেরাটোপে তাঁদের প্র্যাক্টিস করাচ্ছেন মিহির দাস ও দুই সহকারী আসাবুল মল্লিক, মনিরুল ইসলাম। মিহিরবাবু বলেন, “শামিমারা নিছক ক্রিকেট খেলছে না। মনে রাখবেন ওঁদের মাঠে নামানোটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আফগানিস্থানের মহিলা-ক্রিকেট দলের মতোই। শেষতক কিন্তু পেরেছি। তবে এখনও অনেক দূর যেতে হবে।”
তালিবান জমানার শেষ প্রান্তে ২০০১ সাল নাগাদ কাবুলের মাঠে-ঘাটে শুরু হয়েছিল মহিলা-ক্রিকেট। ‘জেনানা এনক্লোজার’-এর আড়ালে মাথায় কালো হিজাব, প্র্যাক্টিসের ফাঁকে নীল বোরখার আড়ালে হাঁটু মুড়ে নিয়মিত নমাজ, আপাদমস্ত সবুজ জার্সিতে ঢাকা দিয়ানা কারবাজিদের (আফগান মহিলা দলের অধিনায়ক) ক্রিকেট। তবে তাতেও ঢের আপত্তি মৌলবাদীদের। মহিলা টিমের খেলার আগে কাবুলে বিস্ফোরণের ক্ষতও হয়েছে একাধিকবার। মনখারাপ করে দিয়ানা তবু সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, “কোনও চোখ রাঙানিতেই আমরা ক্রিকেট খেলা বন্ধ করব না।”
শামিমাকে অবশ্য এত বড় কোনও প্রতিরোধের সামনে পড়তে হয়নি। স্থানীয় দুই চিকিৎসক বরুণ বিশ্বাস এবং আতিকুর রহমান মেয়েদের কিনে দিয়েছেন খেলার সরঞ্জাম। স্থানীয় নার্সিংহোমের মালিক হাসানুজ্জামান দিয়েছেন জার্সি। আতিকুর বলছেন, ‘‘ডোমকলের মতো জায়গায় মেয়েরা ক্রিকেট খেলছে, এটাই বড় কথা।”
আর মিহির স্যার চিৎকার করে বলছেন, “এত কিছু টিটকিরি-বাধা পেরিয়ে ক্রিকেট খেলছ...ফাইট শামিমা ফাইট!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.