|
|
|
|
সঙ্ঘের চাপে রাজনাথের দাবি, কংগ্রেসই ক্ষমা চাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৭ ফেব্রুয়ারি |
ভোট রসায়ন বদলাতে গিয়ে সঙ্ঘ পরিবারকেই চটিয়ে ফেলেছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। চাপে পড়ে এখন নিজের মন্তব্যের অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তিনি।
সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে রাজনাথ যে ভাবে ‘ভুল হয়ে থাকলে’ ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন, সঙ্ঘ নেতৃত্ব তাতে ক্ষুব্ধ। সঙ্ঘকর্তারা মনে করছেন, ভোটের মুখে এ ধরনের মন্তব্য গুজরাত দাঙ্গার বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে আসবে। কংগ্রেস-সহ বিজেপি-বিরোধী দলগুলি যে ভাবে লোকসভা নির্বাচনকে মেরুকরণের রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা আরও ইন্ধন পাবে। রাজনাথের এই মন্তব্যের পরই কংগ্রেস নেতারা আসরে নেমে পড়েছেন। বলতে শুরু করেছেন রাজনাথ কেন, ক্ষমা তো চাওয়া উচিত মোদীর। অথচ আদালত থেকে ক্লিনচিট পাওয়ার পর মোদী এখন দাঙ্গা-পর্ব পিছনে ফেলে শুধু উন্নয়ন নিয়েই কথা বলছেন। আরএসএসের নেতারা বলছেন, রাজনাথ বড়জোর বলতে পারতেন, মোদীর উন্নয়নের মডেলে সকলেরই উন্নয়ন হবে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলে বিতর্ক উস্কে দেওয়াটা কাম্য নয়।
সঙ্ঘের রোষের মুখে পড়ে রাজনাথ অবশ্য তাঁর মন্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা করছেন। তিনি বলেন, “বিজেপি তো কোনও ভুল করেনি! আমরা বরাবরই সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার পথে থেকেছি। বরং কংগ্রেসই বার বার সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপস করেছে। কংগ্রেসেরই উচিত দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া, বিজেপির নয়।” কিন্তু সঙ্ঘের কথায় নিজের বক্তব্য বদলালেও সঙ্ঘ নেতাদের রাজনাথ বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি সুকৌশলেই তাঁর মন্তব্য করেছেন। তাঁর মন্তব্যে যাতে গুজরাত দাঙ্গার বিতর্ক উস্কে না ওঠে, সে বিষয়েও সতর্ক ছিলেন। তিনি বলেছেন, যদি কোনও ভুল হয়, তা হলে ক্ষমা চেয়ে নেবেন। যার অর্থ, অতীত নয়, ভবিষ্যতের কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু সঙ্ঘ নেতাদের বক্তব্য, বিরোধীরা লাগাতার মোদীর উপরে ক্ষমা চাওয়ার চাপ বাড়িয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে এই শব্দ উচ্চারণ করলেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে গুজরাত দাঙ্গার ভূত।
আরএসএস সূত্রের মতে, শুধু এই মন্তব্যটিই নয়, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিষয়েই রাজনাথের বক্তব্য সঙ্ঘ নেতাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে মোহন ভাগবতের যে বিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল, রাজনাথের ক্ষেত্রে তার ঘাটতি রয়েছে। আরএসএসের এক সূত্রের মতে, সংখ্যালঘুদের প্রতি বার্তা দেওয়ার দিনেই ‘মোদীত্ব’ নামক একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজনাথ আরও একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। সেটি অবশ্য সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে গিয়েছে। রাজনাথ বলেন, “যিনি সঙ্ঘের প্রচারক হন, তিনি কখনও মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। নরেন্দ্র মোদী প্রচারক হিসাবে কাজ করা সত্ত্বেও তাঁর ভাগ্যই তাঁকে এই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।” আপাত ভাবে এই মন্তব্যে মোদীর তারিফ থাকলেও আসলে সূক্ষ্ম ভাবে তাঁর সমালোচনাই করা হয়েছে বলে মনে করছেন সঙ্ঘ নেতৃত্বের একাংশ।
আরএসএস নেতারা ভালই জানেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলেও দলের অনেক নেতার মন থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা মুছে যায়নি। ভোটের পর শরিক-নির্ভরতা বাড়লে যদি মোদীর নামে ঐকমত্য না হয়, তা হলে তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে এই স্বপ্ন দেখেন অনেকে। সেই কারণে মোদীর প্রতি অনেকেরই ঈর্ষা রয়েছে। ব্যতিক্রম নন রাজনাথও। বিজেপির অন্দরমহলে একটি বিষয় কারও অজানা নয়, ভোটের মুখে সঙ্ঘের চাপে দল ঐক্যের ছবিটি দেখালেও আসলে তলে তলে সম্পর্কের চোরাস্রোত অব্যাহত। রাজনাথ এখন মোদীর সঙ্গে প্রতিটি সভায় উপস্থিত থাকছেন। কিন্তু সেটা যতটা না স্বেচ্ছায়, তার থেকেও বেশি মোহন ভাগবতের নির্দেশ মেনে। প্রতিটি সভায় মোদীই থাকছেন মূল আকর্ষণ। দলের সভাপতি হয়েও
সেই মর্যাদা পাচ্ছেন না রাজনাথ। রাজনাথ-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, দলের সভাপতি হিসাবে এটা আদৌ ভালো অভিজ্ঞতা নয়। |
|
|
|
|
|