‘সাবধানে ভাই’ রিকশা এলেই বোঝে রসিক জন
দিনে দু’বার একই সওয়ারি নিয়ে রোজ বন্দর এলাকার অলিগলিতে হাজির হন এলাকার পরিচিত রিকশাওয়ালা। যত টাকাই দিন না কেন, ওই রিকশা ভাড়ায় পাবেন না। ওরা না রিকশাওয়ালা, না সওয়ারি। ওরা মাদকের ফেরিওয়ালা।
বন্দর এলাকার খিদিরপুর, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর, হাইড রোড এলাকার অলিগলিতে দিন-রাত ওই ধরনের শ’পাঁচেক রিকশা ঘুরে বেড়ায়। রিকশার চামড়ার সিটের তলায় মাদকের পুরিয়া ঠাসা। শুধু পুরিয়া নয়। রয়েছে ওষুধের অ্যাম্পুল ও সিরিঞ্জও। বন্দরের ঘিঞ্জি এলাকায় ধীর গতিতে চলে ওই রিকশা। মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে যায় কোনও গলির মুখে। রিকশাওয়ালা হাঁক পাড়েন, “সাবধানে ভাই।” মাদকের ফেরিওয়ালা এলাকার হাজির হওয়ার পরে মাদকাসক্তদের জানান দেওয়ার ওটাই ‘কোড-ল্যাঙ্গুয়েজ’।
তেমনই এক দুপুরে খিদিরপুর এলাকার ইব্রাহিম রোডে দেখা পাওয়া গেল ‘সাবধানে-ভাই’ রিকশাওয়ালার। ঘিঞ্জি এলাকার একটি গলির মুখে দাঁড়িয়ে রিকশাটি। তাকে ঘিরে অপরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরা কয়েক জন যুবক। চালকের হাতে ৫০-১০০ টাকার নোট গুঁজে দিতেই সওয়ারির হাত থেকে মিলে গেল কাগজের ছোট ছোট পুরিয়া। তা নিয়ে আবজর্নার স্তূপের দিকে এগিয়ে গেল ওই যুবকের দল। ভিড় একটু হাল্কা হতে ফের ধীর গতিতে এগোলো ‘সাবধানে-ভাই’ রিকশা।
বন্দর এলাকার অলিগলির প্রতিদিনের এই দৃশ্য সকলেরই চেনা। এলাকার এক কাপড়ের ব্যবসায়ীর কথায়, “এখানে রোজই এমন ভাবে মাদক ফেরি করা হয়।” একটু চাপা স্বরে মুখটা কানের কাছে নিয়ে এসে ওই ব্যবসায়ী বলেন, “একটু এগিয়ে গিয়ে পুরসভার আবজর্নার স্তূপের কাছে গিয়ে দেখুন।”
কিছুটা এগিয়ে আবজর্নার স্তূপের কাছে যেতেই চোখে পড়ল, নোংরা জামাকাপড় পরা ওই যুবকের দল গোল হয়ে বসে। কেউ হাতের শিরায় ইঞ্জেকশন নিচ্ছেন, কেউ রাংতা কাগজের তলায় দেশলাই জ্বালিয়ে সরু পাইপ দিয়ে টানছেন ধোঁয়া। অপরিচিত এক জনকে দেখেও কারও কোনও বিকার নেই। এর মধ্যেই ওই ব্যবসায়ী নিজের ছোট দোকানের কাছে এসে বললেন, “একটু বসুন। আবার রিকশা আসবে। আমার দোকানের সামনেই দাঁড়াবে। সব দেখবেন।”
প্রায় আধ ঘণ্টা পরে কানে এল ‘সাবধানে ভাই’ হাঁক। দোকানের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। আর একটি রিকশা হাজির। পিছনের সিটে এক জন মাথা নিচু করে বসে। গলির ভিতর থেকে কয়েক জন বেরিয়ে এসে ঘিরে ধরলেন রিকশা। এ বার কেনাবেচার পালা। একটি পুরিয়া ৫০ টাকা। চারটে নিলে একটি ‘ফ্রি’।
শুধু এ ভাবেই নয়, বন্দর এলাকায় নানা কায়দায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় মাদক। এলাকার বাসিন্দারা জানান, সকাল ন’টা থেকে রাত ১২টা মোমিনপুর বাজারের সামনে রাস্তার উপরে কার্যত অবাধেই বিক্রি হয় মাদক। ওই এলাকায় মোটর সাইকেলেও ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় মাদক। ‘মোবাইল নম্বর নিয়ে নিন। যেখানে আসতে বলবেন, মাদক পৌঁছে যাবে সেখানেই’।
শুধু এ ছবিই নয়। বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, হাইড রোড এলাকায় ঘোরাঘুরি করলে চোখে পড়বে অন্য দৃশ্যও। রাস্তার ধারে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন মাদকাসক্তরা। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। আধমরা অবস্থায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন রাস্তায়। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে উঠছেন।
মাদকাসক্তদের চুরি-ছিনতাইয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না।
কেন এঁদের এড়িয়ে যায় পুলিশ?
লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কথায়, ওই সব এলাকায় মাদকাসক্তদের মাধ্যমেই মাদক ব্যবসা হয়। মাদক বিক্রির কমিশন হিসেবে মাদকই দেওয়া হয়। অধিকাংশ পুলিশই মাদকাসক্তদের গ্রেফতারের বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে ওই কর্তার ব্যাখা, গ্রেফতার করে হাজতে রাখলে মাদকাসক্তদের মাদক সরবরাহ করতে হয়। নেশায় টান পড়লে ওঁরা পাগলের মতো আচরণ করেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেই কারণেই ওঁদের গ্রেফতারে ঝুঁকি রয়েছে। এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার কথায়, মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। সেই কারণেই তারা মাদকাসক্তদের ব্যবহার করছে।
বন্দর এলাকার এক থানার ওসি বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে মাদক কারবারিদের এজেন্টদের ধরে ফেলি। কিন্তু মূল ব্যবসায়ীদের ধরাছোঁয়ার সাধ্য আমাদের নেই। ওঁদের কোনও হদিস পাওয়া যায় না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.