কেন্দ্রীয় সরকারি নীতি মেনে ওএনজিসি চেয়ারম্যানের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব খারিজ করা হলেও, আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের দুই উচ্চপদস্থ অফিসারকে অবসরের পরেও চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় অবসরের পর কাউকে চাকরিতে রাখার (এক্সটেনশন) ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিষয়ক দফতরের যে-বিজ্ঞপ্তি রয়েছে, তা উপেক্ষা করেই ওই অফিসারদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের বর্তমান সিএমডি দয়ানিধি মারান্ডির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। টেলিফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ই-মেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে। কিন্তু একাধিকবার তাঁর দেওয়া ই-মেল আইডিতে মেল করা হলেও তা বাউন্স ব্যাক করে। ব্যক্তিগত ই-মেলে প্রশ্ন পাঠালে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত মেলের উত্তর তিনি দেন না। এর পরে একাধিকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, যাঁদের অবসরের পরেও এক্সটেনশন দিয়ে চাকরিতে বহাল রেখেছেন কর্তপক্ষ, তাঁরা হলেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের সদর দফতরে এক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এবং হাওড়া ডিভিশনের পারচেজ বিভাগের একজন ডেপুটি ম্যানেজার। ওই ডিজিএমের চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তাঁকে পরদিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকেই এক্সটেনশন দেওয়া হয়। হাওড়া ডিভিশনের ওই ডেপুটি ম্যানেজারের অবসর নেওয়ার কথা ছিল জানুয়ারির শেষে। তাঁকেও ফেব্রুয়ারি থেকেই এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম ভেঙে ওই দুই অফিসারকে চাকরিতে রাখার বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সংস্থার আইটাক অনুমোদিত বার্ন স্টান্ডার্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি গোপাল ভট্টাচার্য জানান, “পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে রেল দফতরকে মাস খানেক আগেই জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ফল হয়নি।” উল্লেখ্য, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের পুনরুজ্জীবন প্রকল্প অনুযায়ী সংস্থার হাওড়া এবং বার্নপুর ইউনিট দু’টি রেল অধিগ্রহণ করেছে।
এ দিকে ওএনজিসি চেয়ারম্যানের পদে সুধীর বাসুদেবকে অবসরের পরেও চাকরিতে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলির সুপারিশ সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। অবসরের পরে চাকরির মেয়াদ না-বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের নীতি মেনেই বাসুদেবের এক্সটেনশনের প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বলে খবর। নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন দিনেশ কে সরাফ, যিনি বর্তমানে ওএনজিসি বিদেশের এমডি। আজ শুক্রবার বাসুদেবের অবসর নেওয়ার কথা।
যেখানে ওএনজিসির মতো লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় চেয়ারম্যানের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব খারিজ হল, সেখানে লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে কোন যুক্তিতে দুই অফিসারকে অবসরের পর রাখা হল, সেই প্রশ্নই তুলেছেন কর্মীরা। গোপালবাবু বলেন, “বার্ন স্টা্যন্ডার্ড এখনও রুগ্ণ। কর্মীদের ১৯৯৭ সালের বেতন সংশোধন চুক্তি আংশিক ভাবে চালু হয়েছে। এ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিষয়ক দফতরের নির্দেশিকা মানা হয়নি। বেতন সংশোধন বাবদ বকেয়াও মেলেনি। আমাদের প্রশ্ন, সংস্থার যখন এই অবস্থা, তখন দুই অফিসারের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর যুক্তি কী।”
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড ১৯৯৪ থেকেই বিআইএফআরে। সংস্থা পুনরুজ্জীবনে কেন্দ্র একটি পরিকল্পনা তৈরি করে। সেই অনুযায়ী ২০১০-এর সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। ওয়াগন তৈরি এবং ফাউন্ড্রি বিভাগকে অধিগ্রহণ করে রেল। ফলে সংস্থার হাওড়া এবং বার্নপুরের কারখানা দু’টি রেলের অংশ হয়ে যায়। বাকি অংশটি অধিগ্রহণ করে সেল। এর ফলে সালেমে বার্নের রিফ্র্যাক্টরি কারখানাটি মিশে যায় সেলের সঙ্গে।
তবে সালেম কারখানা মুনাফায় চললেও রেলের অধিগ্রহণ করা কারখানা দু’টিই এখনও লোকসানে। হাওড়া ও বার্নপুরে মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ২০১২-’১৩ সালেই লোকসান ১৯ কোটি। এই অবস্থায় কী কারণে ওই দুই অফিসারকে নিয়ম ভেঙে এক্সটেনশন দেওয়া হল, সেই প্রশ্নের উত্তরই চান সংস্থার কর্মীরা। |