চওড়া রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশ দিয়ে যাতায়াতের উপায় নেই। বাকি অংশে দ্রুত গতিতে ছুটছে ছোট-বড় নানা গাড়ি। জাতীয় সড়ক থেকে শহরের ভিতরের রাস্তাসর্বত্রই এ ভাবে এক পাশ দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা নানা লরি, তেলের ট্যাঙ্কারের জন্য সমস্যায় পড়েন গাড়ি চালকেরা। মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা, প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে খানিক নজরদারি শুরু হয়। কিন্তু তার পরে ফের একই পরিস্থিতি।
গত ডিসেম্বরে বুদবুদের কোটা মোড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দশ চাকার লরিতে গাড়ি ধাক্কা মারায় মৃত্যু হয় এখই পরিবারের চার জনের। রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা লরি, ট্রাক, ডাম্পার যে মাথাব্যথার কারণ, মেনে নিয়েছিল পুলিশ। তার পরে দু’মাস কেটে গেলেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। |
রাজবাঁধে জাতীয় সড়কে বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি। |
রাজবাঁধের কাছে একটি তেলের ডিপোর বাইরে জাতীয় সড়কেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তেলের ট্যাঙ্কার। ফলে, দ্রুত গতিতে যাতায়াত করা গাড়িগুলির দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে। কাঁকসার বাসিন্দা শুভদীপ রায় এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত মোটরবাইকে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, ট্যাঙ্কারগুলি এমন ভাবে রাখা থাকে যে কোনও দ্রুত গতির গাড়ি পাশ কাটিয়ে যেতে গেলে বাধ্য হয়ে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। তাঁর দাবি, “জাতীয় সড়কের পাশে ট্যাঙ্কার রাখার জায়গা থাকলেও কেন সেখানে সেগুলি দাঁড় করানো হয় না, বুঝতে পারি না!” ট্যাঙ্কারের চালকদের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট জায়গায় সব ট্যাঙ্কার রাখা যায় না। গাড়ি রাখলে সময় মতো বের করতে অসুবিধা হয়। তাই রাস্তার পাশে রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। কোটা মোড়ের কাছে রাস্তার দু’দিকেই সার দিয়ে বালি, পাথর, ইট ও অন্য নানা সামগ্রী বোঝাই লরিগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। বালি বোঝাই লরি থেকে রাস্তার উপরে ক্রমাগত জল পড়ে, যাতে বিপদ বাড়ে বলে নানা গাড়ি চালকের দাবি। বুদবুদে মাড়োর বাসিন্দা বাপ্পাদিত্য রায় বলেন, “সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে গাড়িগুলি এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে মোটরবাইক নিয়ে যেতেই ভয় হয়।”
একই চিত্র পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কেও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমনিতেই এই রাস্তা বেহাল। প্রচুর গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস চলে। তাই পণ্য বোঝাই লরি, ডাম্পার রাস্তার পাশে লরিগুলি দাঁড়িয়ে থাকায় বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। বাসিন্দারা আরও জানান, এখন রাস্তাটির বেশ কিছু জায়গায় সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তার জেরে খানিকটা যানজট হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সেই সমস্যা বাড়াচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম সাহার কথায়, “এই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অবিলম্বে পণ্য বোঝাই লরি রাখা বন্ধ করা উচিত।”
ডিপিএলের ২ নম্বর গেট থেকে এমএএমসি কারখানার রাস্তার পাশে রয়েছে নানা বেসরকারি কারখানা, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার বটলিং প্ল্যান্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুরসভার তরফে একটি ট্রাক টার্মিনাস করা হলেও সেটি ফাঁকা পড়ে থাকে। অথচ, রাস্তায় যানজট। বেসরকারি ইস্পাত কারখানার কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা মহাদেব ঘোষ জানান, এই রাস্তা দিয়ে অনেকগুলি মিনিবাস যাতায়াত করে। পড়ুয়া বোঝাই পুলকার থেকে যাত্রীবাহী অটোও চলে। তিনি বলেন, “ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই আছে। স্কুল, অফিসের সময়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।” এক মিনিবাস কর্মী সুভাষ মাহাতোর দাবি, “রাস্তা ফাঁকা না থাকায় বাসগুলি সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা হয়।” ডিভিসি মোড় থেকে দুর্গাপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তাতেও রাতের দিকে রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে লরি, ডাম্পার দাঁড়িয়ে থাকে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
দুর্গাপুরের ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাস্তার একপাশ জুড়ে লরি দাঁড়িয়ে থাকার খবর পুরসভার কাছে এসেছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, “সব সময় এখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে না। লরি দাঁড়ালেই অভিযান চালানো হবে।” জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, জাতীয় সড়কে যাতে ট্যাঙ্কার বা লরি রাখা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। |