স্কুলের জানলা গলে উড়ে এল দোমড়ানো কাগজ, ‘ইওর ফেবারিট স্পোর্টস পার্সন’। পাঁচিলের ছায়ায় বসে মিনিট পনেরোর মধ্যেই দিস্তে কাগজে লেখা হয়ে গেল সচিনের আস্ত জীবনী। পাঁচিল টপকে নিমেষে কার্নিস বেয়ে সচিন পৌঁছে গেল ক্লাস রুমে।
বুধবার দিনভর, মালদহের দু’টি স্কুল, রায়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় এবং মোহনপাড়া নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এ ভাবেই পছন্দসই উত্তর ফিরে পেল পাড়ার দাদা-কাকা কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবীদের তৎপরতায়। এ দিন ছিল মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা। সকাল থেকেই দু’টি স্কুলের সামনেই ছিল পরোপকারীদের চাক বাঁধা ভিড়। ছিল খাঁকি উর্দি এবং সিভিক পুলিশের ঘন ঘন আনাগোনাও। তাতে নকলের অভিযান ঠেকানো যায়নি। তাঁদের চোখের সামনেই কোথাও পাঁচিল টপকে কোথাও বা গাছ বেয়ে পরীক্ষার্থীদের হাতে তাদের সতীর্থরা পৌঁছে দিল প্রিয় খেলোয়াড় বিষয়ক প্যারাগ্রাফ কিংবা পরিস্রুত জলের ব্যবহার নিয়ে লেখা নোটিস। |
বেলা ১২টায় পরীক্ষা শুরুর কিছু পরেই জানলা গলে উড়ে আসতে থাকল নানা আর্তি। পুলিশের সামনেই তা কুড়িয়ে নিয়ে দ্রুত তার উত্তর তৈরি করে পৌঁছনোও শুরু হল। কেউ পাঁচিলে ঝুলে, কেউ বা গাছের মগডাল থেকে জানলা টিপ করে বন্ধুকে ফিরিয়ে দিতে থাকল সেই উত্তর। আধ ঘণ্টার মধ্যেই দু’টো স্কুলের দখল নিল ‘পরোপকারী হানাদারেরা’।
মালদহ শহর থেকে সাকুল্যে ১৪ কিলোমিটার দূরের ওই দুই স্কুলের বাইরে তত ক্ষণে পুলিশের ভিড়। কিন্তু তারা গলা খাঁকারি দেওয়া ছাড়া কিছুই করেনি বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়া দূরে থাক, বেশ কয়েক জন সিভিক পুলিশকে উল্টে ওই যুবকদের পাঁচিলে উঠতে সাহায্য করতেও দেখা গিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। মালদহের এসপি রাজেশ যাদব বলেন, “এমন কাণ্ড যদি হয়ে থাকে তা হলে কেউ অভিযোগ করল না কেন, অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই পুলিশ ব্যবস্থা নিত।”
স্কুলের সামনে মোতায়েন পুলিশও কি নকল রুখতে তৎপর হয়নি? রাজেশ যাদবের কাছে তার উত্তর মেলেনি। মালদহে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। টোকাটুকিতে সাহায্য করার অভিযোগে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ও চাকুলিয়ায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। |