ময়নাগুড়ি লাগোয়া জর্দা নদীর তীরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃহত্তম শৈবতীর্থ জল্পেশ মন্দিরকে ঘিরে আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে শিবরাত্রি উৎসব। এই উপলক্ষে মেলা চলবে দোল পর্যন্ত। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ উৎসব উপলক্ষে সাত দিনের মেলার আয়োজন করেছে। বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম বলেন, “জলপাইগুড়ির সাংসদ মহেন্দ্র রায় মেলার উদ্বোধন করবেন।”
এক দিন আগে, বুধবার থেকে মন্দির সংলগ্ন দোকানের কারিগররা রকমারি মিষ্টি তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এক মিষ্টি বিক্রেতা অমর ভট্টাচার্য জানান, বাসিন্দারা মন্দিরে পুজো দিয়ে শান্তিতে উপোস ভাঙার সময় মিষ্টি মুখে তুল নেন। এ বার রকমারি মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের পরিবর্তনের মত মিষ্টির নামকরণও করা হয়েছে। ঘাসফুল পেল্লাই ল্যাংচার ওজন ১ কেজির মতো। মমতা মিষ্টিমুখ রসগোল্লা ৫০০ গ্রাম। একই ওজনের পান্তুয়া। ধূপগুড়ির বাসিন্দা কারিগর রণজিৎ রায় জানান, প্রতিদিনই দুই কুইন্টাল ছানার মিষ্টি তৈরি হবে। ছানা আসছে মালদহ থেকে। |
মেলার খাবারের প্রস্তুতি শুরু হলেও অন্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে দোকান খোলার কাজ শেষ হয়নি। বিহারের বাসিন্দা টমটম গাড়ি ও বাঁশি বিক্রেতারা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তবে এ বারও সার্কাস, পুতুল নাচ নেই দেখে মেলা শুরুর আগে অনেকে হতাশ। বাসিন্দারা জানান, ১৯৮১-র আগেও সার্কাস, পুতুল নাচের আসর বসত। এ বছর রাজ্য সরকার মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আকর্ষণীয় কিছু আসছে না। মেলাও তার গৌরব হারাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু বলেছেন, “একটা সময় মেলা উপলক্ষে তিন দিন স্পেশাল ট্রেন চালানো হত। ভুটিয়া ও তিব্বতি বিক্রেতা আসত। জেলা পরিষদ মেলা অধিগ্রহণ করার পরে উন্নয়নে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রচারের ব্যবস্থা নেই।” |
ভুটিয়া ও তিব্বতিরা না এলেও উৎসবের দু’দিন আগে থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ভিন রাজ্যের সাধু-সন্তরা। উৎসবের কয়েকটা দিন তাঁদের আখড়া চলবে। মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২৭ ফুট উঁচু বর্তমান জল্পেশ মন্দির তৈরি করেন কোচবিহারের রাজা প্রাণ নারায়ণ ও তাঁর ছেলে মোদ নারায়ণ। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৬৫ সালে। গত বছর শিবরাত্রি উৎসবে মন্দিরে ১ লক্ষের বেশি মানুষের সমাগম হয়।
মন্দির কমিটি সম্পাদক গিরিন্দ্রনাথ দেব বলেন, “এবার মন্দিরে ভিড় বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে ১৩টা সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। ভিড় সামাল দিতে পুলিশ ছাড়াও থাকবে মন্দির কমিটির নিজস্ব ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক।” |