ভুটান যদি পারে তা হলে ভারত কেন পারবে না? এখন এ প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সীমান্ত-শহরে।
ভরা মরসুমে জয়গাঁ দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটক প্রবেশ করেন ভুটানে। আবার কয়েক হাজার পর্যটক ফিরে আসে। এই আসা-যাওয়া কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে শহর জয়গাঁ। প্রায় পুরোটাই খাস জমির উপরে, যেখানে-সেখানে ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। বেআইনি নির্মাণ। রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাক্সি। সকাল ১০টায় শহর থমকে যায় যানজটে। যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা। কয়েক জায়গায় নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। অথচ কয়েক পা ফেললেই ভুটানের ঝকঝকে শহর ফুন্টসেলিং। দু’পাশে পরিকল্পিত ভাবে ঘর-বাড়ি, বাস স্ট্যান্ড, হোটেল আর রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, পার্ক সবই পর্যটকদের একটা রাত থেকে যেতে বাধ্য করে।
ভুটান যদি পারে ভারত কেন পারবে না? তাই জয়গাঁ শহর সাজিয়ে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে জয়গাঁয় ‘ট্যুরিস্ট হাব’ গড়ার দাবি উঠেছে। এই ব্যাপারে আশ্বস্ত করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, জয়গাঁর জমি সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যে কমিটি গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটির প্রথম বৈঠকেই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। সমস্যা মিটলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। উন্নয়ন কাজে সুবিধে হবে। মন্ত্রী বলেন, “অপরিকল্পিত ভাবে শহর গড়ে ওঠায় অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে পর্যটকরা ওই রুট ব্যবহার করে ভুটানে যাচ্ছেন তাঁরা যাতে এক রাত শহরে থাকেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। পরিকল্পিত পরিকাঠামো গড়া হবে। শীঘ্র এ কাজে হাত দেওয়া হবে।” এই এলাকায় ৩৬৪ একর সরকারি জমিতে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বাস করছে। পাঁচশোর উপর দোকান তৈরি হয়েছে। ওই সমস্যা মিটিয়েই পর্যটনের উন্নয়নে রাজ্য সরকার দ্রুত উদ্যোগী হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন গৌতমবাবু।
জলপাইগুড়ি জেলার একটি প্রান্তে জয়গাঁ। প্রকৃতি যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। একের পর এক চা বাগান, ড্রাগনের ছবি সংবলিত ভুটান গেট, পাহাড়, পাশে বয়ে চলা তোর্সা এক অপরূপ সৌন্দর্য মন কাড়ে খুব সহজে। গেট পেরিয়ে ফুন্টসেলিং যেন অন্য জগৎ। বাস স্ট্যান্ড ঘিরে বাজার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, পার্ক সবই যেন গোছানো। তোর্সা ও দূতী নদীর মাঝে গড়ে উঠেছে শিল্পকেন্দ্র। এ ছাড়াও মন কাড়বে তোর্সার পাশে গড়ে ওঠা ‘আমো চু’ বা কুমির প্রজনন কেন্দ্র। শহরের মধ্যে রয়েছে ভগবান বুদ্ধের মন্দির জ্যাংডো পালরি লাখাং, কার্বান্ডি মনাস্ট্রি, খরবন্দি গুম্ফা।
জয়গাঁ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে চেয়ারম্যান মিহির গোস্বামী বলেছেন, “জয়গাঁকে ঘিরে ইতিমধ্যে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। জমি নিয়ে একটি সমস্যা রয়েছে। তা মেটাতে উদ্যোগী সরকার। মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। এটা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা বড় ধাপ।” তৃণমূল নেতা পবন লাকরা বলেন, “পরিকল্পিতভাবে শহর গড়া হলে আরও পর্যটক আসবে। এলাকারও উন্নয়ন হবে।” শিলিগুড়ির ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল জানান, জয়গাঁয় ইমিগ্রেশন সেন্টারে নানা সমস্যা আছে। তিনি বলেছেন, “ওই রুটে প্রচুর বিদেশি যাতায়াত করেন। সে দিকে লক্ষ রেখে ইমিগ্রেশন সেন্টারের উন্নয়ন করা জরুরি। বসার জায়গা, ক্যাফেটেরিয়া করা প্রয়োজন। রাস্তার উন্নয়ন দরকার। জয়গাঁকে ঘিরে একটি ট্যুরিস্ট হাব হলে সাধারণ মানুষ থেকে সরকার সবাই লাভবান হবেন।” |