ফাতুল্লাহর ফ্লাডলাইটের নীচে যখন তাঁর সতীর্থরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ব্যস্ত, তিনি তখন গড়াপেটার অন্ধকার থেকে নিজেকে টেনে তুলতে মরিয়া। তিনি মানে, প্রাক্তন বাংলাদেশ অধিনায়ক মহম্মদ আশরাফুল।
গত বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে খেলা আশরাফুল টুর্নামেন্টে ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট-ফিক্সিং, জোড়া অভিযোগ স্বীকার করে আপাতত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত। তিনি অপেক্ষা করে আছেন বাংলাদেশ বোর্ডের নিযুক্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের জন্য, যে রায় বেরনোর এখনও সপ্তাহদুয়েক বাকি। তবে বোর্ড সূত্রের খবর, তাঁর নির্বাসন ওঠার সম্ভাবনা কার্যত নেই। তাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের অন্যতম মালিককে এ দিন দোষী সাব্যস্ত করল ট্রাইব্যুনাল। যদিও বাকি ছয় অভিযুক্ত ক্রিকেটার নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন কেন্ট অলরাউন্ডার ডারেন স্টিভন্স। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আবার হতাশা প্রকাশ করেছে আইসিসি এবং বাংলাদেশ বোর্ড। এ দিন যুগ্ম বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, “দুই সংস্থাই এই সিদ্ধান্তে অবাক এবং হতাশ। আমরা আরও তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছি। সেটা না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হবে না।” |
ট্রাইব্যুনালে আশরাফুল। ছবি: দেবাশিস সেন। |
বাংলাদেশ বোর্ডের গঠিত স্বাধীন এই ট্রাইব্যুনালের সামনে এ দিন তাঁর দুই আইনজীবী সহ হাজির ছিলেন আশরাফুল। ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরি। নতুন দাড়ি রাখতে শুরু করা আশরাফুল বলছিলেন টিম থেকে দূরে থাকার হতাশার কথা। বলছিলেন, নিয়মিত সতীর্থদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখেন। অনেকটা ভাগ্যের পরিহাসই হয়তো, বর্তমান বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম যখন ফাতুল্লাহে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছেন, ঠিক তখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল আশরাফুলকে। যেখানে ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইসিসির দুর্নীতিদমন শাখার সদস্যরাও।
গত বছর বিপিএলে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স এবং চট্টগ্রাম কিংস ম্যাচে গড়াপেটার জন্য প্রায় তেরো হাজার মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছিল আশরাফুলকে। স্থানীয় মিডিয়ার দাবি, তাঁকে দেওয়া চেক বাউন্স করে যায়। তার দশ দিন পরে আরও একটা ম্যাচে তিনি গড়াপেটা করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বড়িশাল বার্নার্সের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটা সাত উইকেটে হেরে যায় ঢাকা।
আশরাফুল আদৌ দোষী কি না, জানা যাবে দিনকয়েক পরে। আপাতত ২৯ বছরের ক্রিকেটার সপ্তাহে ছ’দিন গুলশানে প্র্যাকটিস করেন। আপাতত তাঁর সঙ্গী তীব্র আফসোস কয়েক বছর আগে তাঁকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে নিয়ে যাওয়া সচিন তেন্ডুলকরের মর্যাদা রাখতে না পারার দুঃখ, আর তাঁর বাবার মর্যাদা রাখতে না পারার যন্ত্রণা। আর এখন আশরাফুল খুঁজছেন একটা সুযোগ নিজেকে, নিজের ভাবমূর্তিকে আর নিজের খেলাকে কলঙ্কমুক্ত করার সুযোগ। |