অবশেষে সহারা কর্তা সুব্রত রায়কে গ্রেফতারের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার কথা বুধবার জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যক্তিগত হাজিরার নির্দেশ অমান্য করায় বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন এবং জে এস খেহরকে নিয়ে গড়া ডিভিশন বেঞ্চ সহারা কর্তার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, সুব্রত রায়কে গ্রেফতার করে আগামী ৪ মার্চ দুপুর ২টোর সময়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির করাতে হবে। মঙ্গলবার ওই একই কারণ দেখিয়ে সুব্রতবাবুর আইনজীবী রাম জেঠমালানি সুব্রতবাবুকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে বলেছিলেন। শীর্ষ আদালত সে দিনই তা খারিজ করে দেয়।
লগ্নিকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার রায় না-মানায় বুধবারই সুব্রতবাবুর সুপ্রিম কোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। সহারার দু’টি শাখা সংস্থার বিরুদ্ধে টাকা ফেরত না-দেওয়ার এই অভিযোগ উঠেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারির রায়েই তাঁকে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই হাজিরার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার সহারার তরফে প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমালানি সহারা হসপিটালের চিকিৎসকের একটি বিবৃতি দাখিল করেছিলেন। সেখানে সুব্রতবাবুর ৯২ বছর বয়স্কা মা ভর্তি আছেন। দু’জন চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, সুব্রতবাবুর মা ছবি রায় হৃদরোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া তাঁর ডায়াবেটিস রয়েছে এবং সেই কারণে কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত। সেই কারণে ‘চিকিৎসাগত ও মানবিক’ কারণে ছায়াদেবীর পাশে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুব্রত রায়ের থাকা একান্ত প্রয়োজন। সুব্রতবাবুর অন্য ভাইবোনেরাও মায়ের পাশেই রয়েছেন। তবে ছায়াদেবী যে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুব্রত রায়ের প্রতি বেশি ঘনিষ্ঠ, সে কথাও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। চিকিৎসকেরাও সেই কারণে চাননি সুব্রতবাবু তাঁর মাকে ছেড়ে অন্যত্র যান। তবে আর্জি আদালতে গ্রাহ্য হয়নি।
বুধবারও জেঠমালানি একই আর্জি জানান। এ দিন সুব্রতবাবু জেঠমালানিকে লেখা আবেদনে বলেন, নিজের বাড়ি লখনউ থেকে ব্যক্তিগত বিমানে দিল্লি গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিয়ে আবার ফিরে আসতে তাঁর প্রায় ৯ ঘণ্টা লেগে যেত। মায়ের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে তাঁকে ছেড়ে এতক্ষণের জন্য বাইরে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও, তাঁর পক্ষে সেটা এ দিন সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি অনুকূল হলেই তিনি আদালতকে তা জানাবেন। আদালত পরবর্তী তারিখ জানালে সেই দিনই তিনি হাজির হবেন। সহারার অন্য ডিরেক্টররা অবশ্য এ দিন সুপ্রিম কোর্টে হাজির ছিলেন। এঁরা হলেন: অশোক রায়চৌধুরী, রবিশঙ্কর দুবে এবং বন্দনা ভার্গব। ৪ মার্চ সুব্রতবাবুর সঙ্গে তাঁদেরও সুপ্রিম কোর্টে হাজির হতে হবে।
শীর্ষ আদালত বুধবার সাফ জানিয়ে দেয়, যে-তথ্যের ভিত্তিতে সুব্রতবাবু হাজিরা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন, তা যথেষ্ট নয়। জেঠমালানিকে উদ্দেশ করে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “গত কালই আমরা আপনার আর্জি নাকচ করেছি। আজ একই কারণ দেখিয়ে করা আর্জি মেনে নেওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। মনে রাখতে হবে, এটা দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আমরা সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করছি।” |