জলের অভাবে পাট, বোরো ধান ও খারিফ ভুট্টা চাষের কাজে নেমে বিপাকে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার নয়টি ব্লকের চাষিরা। ডিজেলের দাম বাড়ায় অনেকেই পাম্পসেট দিয়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে পারছে না। ওই পরিস্থিতিতে এ বার কৃষিতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন জেলা কৃষি আধিকারিকরা। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা শিবপ্রসাদ রায় বলেন, “গত তিনমাসে সেভাবে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জলের অভাবে পাট, বোরো ধান ও ভুট্টা চাষে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে জটিলতা বাড়বে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাসে কমপক্ষে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত না হলে চাষের কাজে ক্ষতি হবে। প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় কয়েক দফায় প্রায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বার এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫ মিলিমিটার। এতে খেতের মাটি শুকিয়েছে। মার্চ মাসে পাট, বোরো ধান ও ভুট্টা চাষের কাজ শুরু হয়। অগস্ট মাসে পাট, জুন মাসে ধান এবং জুলাই মাসে ভুট্টা ঘরে তোলেন চাষিরা। জেলার নয়টি ব্লকে ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ লক্ষ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান, ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লক্ষ ২১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাট এবং ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হয়। হেমতাবাদ ব্লক কৃষি অধিকারিক শ্রীকান্ত সিংহ বলেন, “মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় পাট, ধান ও ভুট্টা চাষের কাজ করতে সমস্যায় চাষিরা। দু’সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে চারা গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যেতে পারে।”
কৃষি কর্তারা জানান, জেলার নয়টি ব্লকে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। তারমধ্যে মাত্র ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা আছে। জেলার লক্ষাধিক চাষিকে বর্ষার মরশুম বাদ দিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে পাম্পসেট ভাড়া করে অথবা পুকুর বা জলাশয় থেকে জল তুলে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বার চাষিদের অমেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। হেমতাবাদ ব্লকের সুরঙ্গপুর এলাকার চাষি কবাদ আলি বলেন, “বৃষ্টি না হওয়ায় এ বার ঘণ্টা পিছু ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ডিজেল চালিত পাম্পসেট এনে জমিতে সেচের জল দিতে হচ্ছে। এটা দিনের পর দিন কজন চাষির পক্ষে সম্ভব!” তিলান এলাকার পদ্মলোচন রায় বলেন, “পাম্পসেট ভাড়া করার ক্ষমতা নেই। জলের অভাবে এখনও ভুট্টা রোপণ করতে পারিনি। এখন আমরা বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।”
কেন এ পরিস্থিতি! কেন জেলার ৯৫ শতাংশ জমিতে সেচের ব্যবস্থা হয়নি! রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য বলেন, “সরকার আগামী ৩ বছরের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলার ৭০ শতাংশ চাষযোগ্য জমি সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এখানেও কাজ হবে।”
|
সব্জির চাষে সঙ্কটে চাষিরা
অনুপরতন মোহন্ত • বালুরঘাট |
ফাল্গুন পার হয়ে চৈত্র পড়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা নেই দক্ষিণ দিনাজপুরে। এতে বোরো ধান থেকে সবজি চাষে সংকটে পড়ে গিয়েছেন প্রায় গোটা জেলার চাষি। কড়া রোদের দাপাদাপিতে মাঠঘাট শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিহীন আবহাওয়ায় চাষিদের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘন হচ্ছে। চিন্তিত জেলা কৃষি দফতরও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উপকৃষি অধিকর্তা লক্ষ্মীকান্ত মান্ডি এই প্রসঙ্গে বলেন, “গত বছর পরিসংখ্যান মতো এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু গোটা ফাল্গুন মাস কেটে গেলেও এখনও একফোঁটা বৃষ্টি হয়নি।” এই অবস্থায় জেলা জুড়েই চাষ আবাদের কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরে এবছর ৩৭,০০০ হেক্টার জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাষিরা বীজতলার কাজ শেষ করে চারা রোপন শুরু করেছেন। সবজি চাষ হচ্ছে প্রায় ৬০০০ হেক্টার জমিতে। কিন্তু জলের অভাবে ইতিমধ্যে বোরোর চারা বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। ফসল বাঁচাতে বসছে সাবমার্সিবল পাম্প। তুলে নেওয়া হচ্ছে মাটির নীচের জল জলস্তর। ইতিমধ্যে জলস্তর নেমে গিয়ে তপন, হরিরামপুর ও বংশীহারী ব্লকে পানীয় জলের নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়ছে বলে পাশাপাশি জল সঙ্কটও দেখা দিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। কৃষি আধিকারিকেরা জানান, ভূর্গস্থ জলের যোগান ঠিক রাখতে অবিলম্বে বৃষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু আবহাওয়ার অবস্থা থেকে সেই আশা চাষিরাও দেখছেন না। অনেকেই অতিরিক্ত টাকা গুনে ফসল রক্ষায় ভাড়া দিয়ে পাম্প ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। ছোট চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। অতিরিক্ত খরচের অবস্থা না থাকায় তাঁদের পক্ষে পাম্প ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তপন ব্লকের আউটিনা গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌড়গঞ্জ, নিমগাছি, যশুরাপাড়া, কাঁঠালপুকুর এলাকার ছোট চাষিরা প্রমাদ গুনছেন। তাদের বক্তব্য, “পুকুর, জলাশয়ের জল সেচ দিয়ে বোরোর চারা বুনেছিলাম। কিছু সবজি চাষও হয়। এখন জলাশয়গুলিও শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে কি হবে বুঝতে পারছি না।” |