গত চার মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতক মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির মধ্যে মেডিক্যালেই প্রথম ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) খোলার সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যে শিশু ও প্রসূতি মৃত্যু ঠেকাতে গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের কর্তারাই এ কথা মানছেন। কেন মেডিক্যালে এত বেশি নবজাতক মারা যাচ্ছে, তা আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখাও শুরু করেছেন টাস্ক ফোসের্র্র সদস্যেরা।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেডিক্যালে জন্মানো প্রায় ৪ হাজার সদ্যোজাতের মধ্যে ২৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, নবজাতক মৃত্যুর হার প্রায় ৬%। অথচ, নিয়মানুযায়ী ২-৩ শতাংশের বেশি নবজাতকের মৃত্যু হওয়ার কথাই নয়। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০১২ সালের নভেম্বরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৭৬ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জন সদ্যোজাতের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাসপাতালে জন্মানো ৪৯ জন সদ্যোজাত এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪০ জন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “একটি নবজাতকের মৃত্যুও কাম্য নয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। সেখানে মেডিক্যালে এক মাসে ৭০-এর বেশি নবজাতক মারা গিয়েছে। এটা হতে পারে না। তাই মেডিক্যালেই তড়িঘড়ি এসএনসিইউ খুলি আমরা।” তিনি জানিয়েছেন, ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মেডিক্যালেই প্রায় ৫ হাজার শিশু জন্মেছিল। মৃত্যুর হার ছিল ৩%-এর মতো। কিন্তু ২০১২-র শেষ থেকে ২০১৩-র প্রথম কয়েক মাস এই হার অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ত্রিদিববাবু বলেন, “মেডিক্যালে নবজাতকদের মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে কম ওজন, জন্মের পরেই সংক্রমণ ও ঠিকমতো অক্সিজেন টানতে না-পারায় অধিকাংশ সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে।”
কেন সংক্রমণ ঘটছে শিশুদের? জন্মের পরে কেনই বা তারা অক্সিজেন নিতে পারছে না? ত্রিদিববাবুর উত্তর, “মেডিক্যাল কলেজে দীর্ঘ দিন নবজাতক পরিচর্যার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব ছিল। সেটা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। প্রয়োজনীয় সংখ্যায় রেডিয়েন্ট ওয়ার্মার, সাকশন পাম্প, অক্সিজেনের ব্যবস্থা প্রভৃতি ছিল না। তা ছাড়া, যথেষ্ট কর্মী বা নার্স না থাকায় মায়েদের অনেক ক্ষেত্রে সময় মতো লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটাও সদ্যোজাতের জীবন সঙ্কটাপন্ন হওয়ার জন্য দায়ী।”
কেন এত দিন পরিকাঠামো উন্নত করার চেষ্টা হয়নি? ত্রিদিববাবু বলেন, “সেটা তো আগের সরকার বলতে পারবে। এই সরকারই তো বিপদ বুঝে তড়িঘড়ি উদ্যোগী হয়ে মেডিক্যালে এসএনসিইউ তৈরি করল। আশা করছি, আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
প্রসঙ্গত, আরজিকরেও ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩-এর জানুয়ারি পর্যন্ত ১২৭ জন সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে সদ্যোজাত মৃত্যুর হার প্রায় ৭-৮ শতাংশ। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে গঠিত টাস্ক ফোসর্র্ এই বিষয়টিও আলাদা ভাবে খতিয়ে দেখছে। |