ঝুঁকি নিয়েই সুস্থ সন্তান প্রসব ক্যানসার রোগিণীর
লকাতা ও মুম্বইয়ের ক্যানসার চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছিলেন, কেমো নিয়ে যদি কয়েক বছর ভাল থাকেন, সেটাই অনেক প্রাপ্তি। সন্তানধারণের প্রশ্নই ওঠে না। কথাটা মনে ধরেনি শ্যামনগরের মিঠু দাসের। চিকিৎসকদের কথা কার্যত অমান্য করেই অন্তঃসত্ত্বা হন ক্রনিক মাইলোজেনাস লিউকেমিয়ার রোগিণী মিঠু। মাস দেড়েক হল একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
দাস দম্পতি খুশি। কিন্তু এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে সুস্থ সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। মায়েরও প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কা। ক্যানসারকে জয় করার সাহস সব সময়েই প্রশংসনীয়। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন সন্তানধারণ করে সেই সাহস না দেখানোই ভাল।
জেনেশুনে সেই ঝুঁকিটাই নিয়েছিলেন সুদেব ও মিঠু দাস। ২০০৩ সালের জুলাইয়ে শ্যামনগরের বাসিন্দা সুদেবের সঙ্গে বিয়ে হয় মিঠুর। ওই বছরেরই শেষ দিকে মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হওয়া-সহ কিছু উপসর্গ থেকে মিঠু ধরে নেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, তিনি রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। সুদেব মিঠুকে নিয়ে মুম্বইয়ে গেলে সেখানে একই কথা বলা হয়। চিকিৎসাও শুরু হয়। ডাক্তাররা জানান, দীর্ঘ দিন কেমোথেরাপির ওষুধ খেতে হবে। সন্তানধারণ করা যাবে না। কলকাতার চিকিৎসকেরাও একই কথা বলেন।
মিঠু দাস
সুদেববাবু জানান, ২০০৯ সালে অন্তঃসত্ত্বা হন মিঠু। ২৮ সপ্তাহের মাথায় গর্ভেই সন্তানের মৃত্যু হয়। তবু সন্তানের আশা ছাড়েননি তিনি। কলকাতায় স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক বিন্দু রোহতগির তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের গোড়ায় সন্তান জন্মায়। সুদেববাবু জানান, আট সপ্তাহ থেকে ২১ সপ্তাহ ক্যানসারের ওষুধ বন্ধ ছিল। তার পরে ফের ওষুধ চালু হয়। প্রসবের এক সপ্তাহ আগে আবার তা বন্ধ করে প্রসবের পরে ওষুধ চালু হয়েছে।
সব জেনেও কেন ঝুঁকি নিলেন ওই চিকিৎসক? বিন্দু রোহতগি বলেন, “ওঁরা সন্তানের জন্য উন্মুখ ছিলেন। ডাক্তার হিসেবে মনে হয়েছিল সাহায্য করা উচিত।”
ক্যানসার চিকিৎসকেরা কিন্তু এই যুক্তি মানতে পারছেন না। আর জি করের ক্যানসার বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মা হওয়ার এই আকুলতা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডাকতে পারে। ক্যানসারের ওষুধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভস্থ শিশুর শরীরে বিকৃতি ঘটায়। জিনগত সমস্যার আশঙ্কাও থাকে।” ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “বহু মর্মান্তিক পরিণতি দেখেছি। রোগীদের সতর্ক করার ব্যাপারে ডাক্তারদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।”
হেমাটোলজিস্ট শর্মিলা চন্দ্রের কথায়, “কেমোথেরাপির ওষুধে গর্ভস্থ সন্তানের নানা বিকৃতির আশঙ্কা থাকে। এই কারণেই আমরা এর পক্ষপাতী নই।
স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীরও বলেন, “বিপজ্জনক প্রবণতা। ক্যানসারের বহু ওষুধে গর্ভেই ভ্রূণের মৃত্যু হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মায়। তা ছাড়া মায়ের দুর্বল শরীরেও এই সময়ে রক্তাল্পতা, সংক্রমণের ভয় থাকে।” যদিও সব আশঙ্কাকেই উড়িয়ে দিয়ে মিঠু-সুদেবের জীবনে এসেছে সুস্থ সন্তান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.