ডোবাচ্ছে ভাড়া না-বাড়ানোর গোঁ ২৮ হাজারের ঘাটতি পূরণে
কর্পোরেট বাস ৪টি

বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে প্রায় আঠাশ হাজার।
সেই ঘাটতি পূরণে আপাতত নেমেছে মাত্র চারটি কর্পোরেট বাস!
এ ভাবে ঘাটতির মোকাবিলা করা যে সম্ভব নয়, মেনে নিচ্ছেন পরিবহণ দফতরের বড় বড় কর্তাও।
খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বিধানসভায় স্বীকার করে নিয়েছেন, বেসরকারি পরিবহণের ৭০ শতাংশ বাস বসে গিয়েছে। বাস-মালিক সংগঠনগুলির হিসেবে এখন সারা রাজ্যে বাস চলে ৪০ হাজারের মতো। তার ৭০ শতাংশ মানে ২৮ হাজার। বিধানসভাতেই পরিবহণমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ওই বিপুল সংখ্যক বাসের অভাব ঘোচাতে রাজ্য সরকার কর্পোরেট বাস চালাবে। তা, তাঁর পরিবহণ দফতরের হিসেব অনুসারেই এ-পর্যন্ত মাত্র চারটি কর্পোরেট বাস চলতে শুরু করেছে রাস্তায়।
ঘাটতি পূরণ হবে কী ভাবে?
পরিবহণমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলছেন, “শুরুতে একটু সময় লাগে। এক বার চলতে শুরু করলে দেখবেন, চলতেই থাকবে। ধীরে ধীরে রাস্তায় কর্পোরেট বাসের সংখ্যা বাড়বে।’’
মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও পরিবহণ দফতরের কর্তারা অন্য কথা বলছেন। পর্যাপ্ত ভাড়া না-বাড়ানোয় বেসরকারি বাস সারি দিয়ে রাস্তা থেকে উঠে গিয়েছে। পরিবহণকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বাসের বদলে যার কথা ভাবা হয়েছে, সেই কর্পোরেট বাস চালানোর প্রক্রিয়াও অথৈ জলে পড়েছে ভাড়া না-বাড়ানোর একগুঁয়েমির জেরে। ফলে বেসরকারি পরিবহণের খামতি কর্পোরেট বাস দিয়ে পূরণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সরকার ইচ্ছুক কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পরেও কলকাতার রাস্তায় কর্পোরেট বাস চলেছে মাত্র চারটি। এবং সেগুলিও চলছে সরকারের দেওয়া শর্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই।
কী শর্ত দিয়েছিল সরকার?
সরকারি বিজ্ঞাপনে শর্ত দেওয়া হয়েছিল:
• ইচ্ছুক সংস্থাগুলিকে প্রথম ধাপে অন্তত ৫০টি বাস রাস্তায় নামাতে হবে। তার মধ্যে ২০ শতাংশ বাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
• ৫০টি বাস রাখার মতো জমির ব্যবস্থা করতে হবে আগ্রহী সংস্থাকে।
• বেসরকারি বাসের মালিকদের মতো কর্পোরেট সংস্থা যাতে হুটহাট ধর্মঘট ডাকতে না-পারে, সেই জন্য বাসের পারমিট থাকবে সরকারের কাছে।

কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবুর নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণেশ্বর থেকে আমতলা পর্যন্ত কর্পোরেট বাসের যে-রুট চালু হয়েছে, তাতে রুটের পারমিট সরকারের হাতে নেই। সেই পারমিট কর্পোরেট সংস্থাকেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ৫০টি বাস নামানোর শর্তও মানেনি কর্পোরেট সংস্থা। ৫০টির বদলে মাত্র চারটি বাস দিয়েই যাত্রা শুরু করেছে তারা। আর ৫০টি বাস রাখার জমিও দেখাতে পারেনি কর্পোরেট সংস্থা।
শর্ত না-মানা সত্ত্বেও ওই সংস্থা পারমিট পেল কী ভাবে?
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, “ব্যাপারটাকে কর্পোরেট বাস হিসেবে না-ভাবলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না। কর্পোরেট বাস তো বাড়তি পরিষেবা। এবং তা দিতে গেলে ভাড়াও বেশি গুনতে হবে। অথচ কর্পোরেট বাসের ভাড়া তো বেশি হচ্ছে না। তাই মনে করুন, এক জন বেসরকারি মালিককেই ওই চারটি বাসের পারমিট দেওয়া হয়েছে।”
এ ক্ষেত্রেও বাসের ভাড়া বেঁধে দিয়েছে সরকারই। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকার মিনিবাসের ভাড়ার আদলেই কর্পোরেট বাসের ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে। এবং সেই ভাড়া নিয়ে ওই কর্পোরেট সংস্থারও সুর বেসরকারি বাসের মালিকদের মতোই। ওই সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এই ভাড়ায় বাস চালানো অসম্ভব।” তা হলে বাস চালাতে রাজি হলেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পরিবহণমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ওই কর্পোরেট সংস্থার কর্তা বলেন, “কিছু দিন পরে যাত্রী-সংখ্যা বাড়বে, এই আশায় প্রাথমিক ভাবে চারটি বাস চালাতে রাজি হয়েছে সংস্থা। তা ছাড়া সরকার কথা দিয়েছে, বেশি ভাড়ায় কিছু দিনের মধ্যেই এসি বাস চালাতে দেবে। ওই বাসের লাভে এখনকার ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।”
বেসরকারি বাসের মালিকদের বক্তব্য, জ্বালানি এবং সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া বাড়ায়নি সরকার। ফলে ক্ষতির বহর সামাল দিতে না-পেরে মালিকেরা বাস নামাচ্ছেন না।
একই কারণে বাস চালাতে চাইছে না কর্পোরেট সংস্থাগুলিও। যদিও পরিবহণমন্ত্রীর দাবি, “আগেকার বামফ্রন্ট সরকারের নীতিই বেসরকারি বাস কমে যাওয়ার কারণ। আমরা বরং বিভিন্ন ভাবে রাস্তায় বাসের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
কর্পোরেট বাস চালাতে ২০১২ সালের শুরুতে প্রথম বিজ্ঞাপন দেয় পরিবহণ দফতর। সাড়া দিয়েছিল মাত্র তিনটি সংস্থা। তার মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাস নামানোর দৌড়ে ছিল একটি সংস্থা। প্রথম দফায় বিফল হয়ে গত অগস্টে ফের বিজ্ঞাপন দেয় পরিবহণ দফতর। তখন পাঁচটি সংস্থা আবেদন করে। তাদের মধ্যে তিনটি সংস্থা বাস চালানোর দৌড়ে রয়েছে। কিন্তু তাদের সকলে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ায় বাস চালাতে রাজি নয়।
পরিবহণকর্তারা বলছেন, এই অবস্থায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সংস্থাকে দিয়ে চারটি কর্পোরেট বাস চালিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা গেলেও তাতে বেসরকারি বাসের খামতি ঢাকা যাবে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.