সব শরিক দলের নেতৃত্বকেই ‘নমনীয়’ মনোভাব নিয়ে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েতের আসন বণ্টনের কাজ শেষ করতে হবে বলে নির্দেশ জারি করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ফ্রন্টের মধ্যে সর্বত্র সমস্যা না-মেটায় আসন ভাগাভাগির সময়সীমা বাড়িয়ে ২৩ মার্চ করতে হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের জেদের জন্যই সমস্যা মিটছে না বলে বিমানবাবুর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন শরিক নেতারা। আর এ সবের জেরেই বিমানবাবুর ‘নমনীয়’ হওয়ার নির্দেশ।
পঞ্চায়েতের আসন বণ্টনের জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার আলিমুদ্দিনে বসেছিল বামফ্রন্টের বৈঠক। এর আগে আসন ভাগাভাগি মিটিয়ে ফেলে ১৪ মার্চের মধ্যে সব জেলা থেকে রিপোর্ট চেয়েছিলেন বিমানবাবু। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি। বেশ কিছু জেলার কিছু অংশে শরিকদের মধ্যে আসন নিয়ে টানাটানি অব্যাহত। কোন জেলায় কী পরিস্থিতি তার রিপোর্ট দিতে গিয়েই এ দিন ফ্রন্ট বৈঠকে সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরা অভিযোগ করেন, রাজ্যে বামেরা ক্ষমতা হারালেও নিচু তলায় সর্বত্র সিপিএমের মনোভাবে বিশেষ পরিবর্তন এখনও আসেনি। বেশ কিছু জেলার কিছু কিছু অংশে স্থানীয় সিপিএম নেতারা শরিকদের দাবি যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করছেন না বলেই সমস্যা মিটছে না। মঞ্জুবাবুদের সমর্থন করেন আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, বিশ্বনাথ চৌধুরী, মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি। সমাজবাদী পার্টি এবং আরসিপিআই-এর মতো ছোট শরিক নেতারাও সমস্যার কথা জানান।
শরিক নেতাদের বক্তব্য জেনে বৈঠকের পরে বিমানবাবু বলেন, “জেলায় জেলায় বাম ঐক্য করতেই হবে। সব আসনে প্রার্থী দেওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করার পরিস্থিতি গড়ে তুলতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সব দলকেই বাম ঐক্য গড়ে তুলতে মনোযোগী হতে হবে। সব জেলায় সব দলের নেতৃত্বের কাছে আবেদন করছি, একটু নমনীয় মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসুন। দেখবেন, সমাধান বেরিয়ে গিয়েছে।” পাশাপাশিই জেলা নেতৃত্বের উদ্দেশে বিমানবাবুর পরামর্শ, পঞ্চায়েত ভোট কবে হবে, তা নিয়ে চর্চা না-করে দ্রুত আসন সমঝোতা সেরে ফেলুন তাঁরা।
বাম ঐক্যের ভিত্তিতে আসন-রফা সারার নির্দেশ দিয়ে বিমানবাবু বেরিয়ে গিয়েছিলেন সিপিএমের জাঠায়। ফিরে এসে জেলায় জেলায় ফোন করে তিনি নিজেই সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন। ফ্রন্ট বৈঠকে এ দিন শরিক দলগুলির কাছ থেকেও রিপোর্ট পাওয়ার পরে তাঁর নির্দেশ, ২৩ মার্চের মধ্যে সব জেলায় বকেয়া আসন মীমাংসা সেরে ফেলতে হবে। আলিমুদ্দিনে রিপোর্ট পাঠাতে হবে ২৫ তারিখ দুপুরের মধ্যে। পরবর্তী বামফ্রন্টের বৈঠক বসবে ২৮ মার্চ। বিমানবাবু জানিয়েছেন, একমাত্র বাঁকুড়া জেলাতেই তিনটি স্তরে আসন নিষ্পত্তির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। তিনটি জেলায় আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে, যে কোনও দিন চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। পাঁচটি জেলায় আসন নিয়ে আলোচনা শুরু করতেই দেরি হয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়া জারি আছে।
বিমানবাবুর হাতে-আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, হুগলি, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, দুই মেদিনীপুরের মতো জেলায় এখনও সমস্যা রয়েছে। তবে ফ্রন্টের বৈঠকে দেখা গিয়েছে, কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে সিপিএম ও অন্য শরিক দলের জেলাওয়াড়ি রিপোর্ট সব ক্ষেত্রে মিলছে না! শরিক দলের এক নেতা বলেন, “কিছু সমস্যা আছে ঠিকই। তবে এ বার অন্য বারের চেয়ে অনেক ভাল বাম ঐক্য হবে বলে আশা করছি।” ওই নেতার মন্তব্য, “এ বার না-হলে আর হবেই বা কবে?” প্রসঙ্গত, সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে এ বার জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা বেড়ে ৭৪৮ থেকে ৮২৫, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৮৭৫৮ থেকে ৯২৪০ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪১৫১৩ থেকে ৪৮৭৪৮ হয়েছে। বামফ্রন্টে এখন আসন-রফা চলছে নিচের দু’টি স্তরেই। |