পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রদেশ কংগ্রেসকে নিয়ম করে দলীয় প্রস্তুতির জেলাওয়াড়ি খতিয়ান দেওয়ার নির্দেশ দিল হাইকম্যান্ড।
রাজ্য কংগ্রেসের কোন জেলায় কোন ব্লক কমিটির কাজের অগ্রগতি কেমন, কোন জেলা কমিটি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোন আসনে প্রার্থী দিতে পারবে, কোন এলাকায় কী কী রাজনৈতিক সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে জেলাভিত্তিক কী রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে এ সবের বিশদ তথ্য হাইকম্যান্ডকে জানানোর পদ্ধতি জেলা সভাপতিদের বুঝিয়ে দিয়েছেন এআইসিসি নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত প্রস্তুতিতে কোনও স্তরের কংগ্রেস নেতৃত্বই যাতে ঢিলেমি না-রাখেন, তা দেখাই এআইসিসি-র উদ্দেশ্য।
বিধান ভবনে রবিবার রাজ্যের সব ক’টি জেলার কংগ্রেস সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদ, রামচন্দ্র কুন্তিয়া এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে জেলাগুলির রাজনৈতিক সমস্যা শোনার পাশাপাশি সেখানকার পঞ্চায়েত প্রস্তুতি ও পঞ্চায়েতের ভোট-চিত্রের পূর্বাভাস বোঝার চেষ্টা করেন শাকিল-কুন্তিয়া।
অধিকাংশ জেলা সভাপতিই বৈঠকে কংগ্রেসের উপরে তৃণমূলের হামলা এবং পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে বাধা পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছে। দু’দফায় এবং আধা-সামরিক বাহিনী ছাড়া ভোট হলে জেলায় জেলায় সংঘর্ষের আশঙ্কার কথাও শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন জেলার পদাধিকারীরা।
বৈঠকের পরে প্রদীপবাবু বলেন, “জেলায় জেলায় সিপিএম এবং তৃণমূলের হামলার অভিযোগ এনেছেন জেলা নেতৃত্ব। প্রত্যেকেই ভোটে নিরাপত্তার দাবিই তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রতি মাসে এক বার করে ব্লক ও জেলা কমিটির বৈঠক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।” জেলাওয়াড়ি খতিয়ান নিয়ে তার প্রেক্ষিতে শাকিল-কুন্তিয়া দু’টি ফর্ম দিয়ে ব্লক ও জেলা স্তরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। জেলাওয়াড়ি পঞ্চায়েত প্রস্তুতির নিয়মিত খতিয়ান দাখিলের কথাও বলেন তাঁরা। নিয়মিত এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে দলের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারের পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক শক্তির মোকাবিলা কিছুটা হলেও সম্ভব বলে কংগ্রেস নেতাদের অভিমত।
আধা সামরিক বাহিনী এনে ভোট করানোর দাবি তুলে শাকিলও বৈঠকের পরে বলেন, “চাই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। ভোটাররা ভয় পান বা তাঁদের জীবন সংশয়ের মতো কোনও ঘটনা ঘটুক, এটা কাঙ্খিত নয়। মানুষ বাঁচলে তবে তো ভোট! রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে ভাবে শান্তিপূর্ণ ভোটের আয়োজন করতে পারবে, তাকেই সমর্থন করব আমরা।” কমিশনের কাজে কারও হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয় বলেও মন্তব্য করেন শাকিল। যদিও মুর্শিদাবাদের জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী তৃণমূলকে কটাক্ষ করেই বলেন, “ভোটটা লুঠ করতে চাইছে তৃণমূল। সে জন্যই আধা-সামরিক বাহিনীতে অনীহা রাজ্য সরকারের। টাকা ও ভয় দেখিয়ে যেন তেন প্রকারে ভোট করতে চাইছে তৃণমূল।”
ভোটের আগে বেশ কয়েক দফায় জেলাভিত্তিক পঞ্চায়েত অগ্রগতির চিত্র এক নজরে পর্যালোচনার পরিকল্পনা রয়েছে শাকিলদের। কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক জানান, ওই ফর্ম দু’টি আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে পূরণ করে শাকিলকে জমা দিতে হবে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকদের। ওই দিন প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে ফের আর এর দফা পঞ্চায়েত নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা শাকিলের। তার আগে যে জেলাগুলিতে কার্যকরী ব্লক কমিটি নেই বা নিয়মিত ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে না, তাদের প্রস্তুতিও সেরে নেওয়ার জন্য শাকিল পরামর্শ দিয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। |