রেশন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করতে তার সঙ্গে নাগরিক সমাজকেও জুড়তে চাইছে রাজ্য খাদ্য দফতর। কোনও রেশন ডিলার প্রতি সপ্তাহে কী কী খাদ্য সামগ্রী কত পরিমাণে নিচ্ছেন, তা ওই ডিলারের অন্তত পনেরো জন গ্রাহকের কাছে মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেবে খাদ্য দফতর। এই পনেরো জনকে কারা হবেন, তা বাছবে খাদ্য দফতরই। খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রবিবার কৃষ্ণনগরে জানান, এই পনেরো জনই হবেন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলের লোকেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাই নাগরিক সমাজকে জুড়তে হবে। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।” নতুন এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডোর স্টেপ ডেলিভারি’।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে রেশন ডিলাররা প্রতি সপ্তাহে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যান। কিন্তু সেই পরিমাণ খাদ্য সামগ্রীই গ্রাহকেরা পান না বলে অভিযোগ ওঠে। ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে পাওয়া সামগ্রী মাঝ পথে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে বহু বার। এমনকী এই অভিযোগও রয়েছে যে, কত খাদ্য সামগ্রী তাঁদের জন্য সেই সপ্তাহে বরাদ্দ করা হয়েছে তা গ্রামের মানুষ জানতেও পারেন না। শেষ পর্যন্ত তা জানতে তথ্য জানার অধিকার আইন ব্যবহার করতে হয়। তাতেও সব সময় সব জানতে পারা যায় না। খাদ্য দফতরে বেশ এই ধরনের কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। আর তাই নজরদারির জন্য এই নতুন ব্যবস্থা শুরু করতে চাইছে তারা। রাজনৈতিক দলের সদস্য, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা সরকারি আধিকারিকদের বদলে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের উপরেই আস্থা রাখছেন খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি জানিয়েছেন, এ বার থেকে ডিস্ট্রিবিউটরেরা দফতরের তালিকাভুক্ত গাড়ি করে খাদ্য সামগ্রী ডিলারের কাছে পৌঁছে দেবেন। তখনই ওই ডিলারের কাছে কত পরিমাণ কী কী খাদ্য সামগ্রী পৌঁছল, তা ওই পনেরো জনকে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হবে। মন্ত্রী জানান, ডিলারের কাছ পর্যন্ত খাদ্য সামগ্রী পৌঁছনোর খরচ রাজ্য সরকারই দেবে।
কিন্তু ওই পনেরো জনকে বাছার মানদণ্ড কী? খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “গ্রামের শিক্ষক, গ্রামীণ চিকিৎসক, এনজিও, স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং গ্রামের বিশিষ্ট মানুষদেরই বাছা হবে। তাঁদের মোবাইল নম্বরে ওই এসএমএস যাবে। তাঁরা যদি এসএমএসে পাঠানো তথ্যের সঙ্গে রেশন ডিলারের দেওয়া তথ্যের গরমিল দেখেত পান, তা খাদ্য দফতরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে এফআইআর করা হবে।” পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কাজ শুরু করা গেলে ছ’মাসের মধ্যেই সারা রাজ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে, “সিপিএম সরকারের আমলে রাজ্যে দলতন্ত্র ছিল। তাই শুধু সিপিএম নেতারাই রেশন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু আমাদের সরকার গণতন্ত্র চায়। তাই সাধারণ মানুষকে রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।”
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সমাজকর্মী অনুরাধা তলোয়ার। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক লোক হন অথবা অরাজনৈতিক লোক, তথ্য যত বেশি মানুষকে জানানো হবে তত ভাল। মানুষ জানতে পারবেন সরকার তাঁর জন্য কতটা বরাদ্দ করছেন। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগের নিষ্পত্তির একটা কার্যকরী ব্যবস্থা দরকার। শুধু স্বচ্ছতায় কাজ হবে না।”
এসএমএস পদ্ধতির মাধ্যমে আধিকারিকদের নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, “দুর্নীতি রুখতে আমরা এসএমএস অ্যালার্ম সিস্টেমও চালু করতে বলেছি। দেশের মধ্যে আমাদের রাজ্যেই প্রথম এই ব্যবস্থা চালু হবে।” গুদাম থেকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময়ে তার পরিমাণও ডিস্ট্রিবিউটর এবং দফতরের পরিদর্শক দু’জনেই এসএমএস করে জেলা খাদ্য নিয়ামককে জানাবেন। দু’জনের পরিমাণ সমান হলেই গুদাম থেকে তা বের করা হবে।
তিনি এ দিন এখানে জানিয়েছেন, জঙ্গলমহলে দ্রুত ৬৮টা আদর্শ রেশন দোকান চালু করা হবে। |