হঠাৎ হাওয়ায় বিকেল এলোমেলো হয়ে গেল শহর-গ্রামের। নদীতে জল উঠল উথলে। চৈত্রের রবিবারের দোল লেগেছে হাওয়ায়। মঠে-মন্দিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ফুলের সাজে সাজানো বিগ্রহকে ঘিরে গাওয়া হচ্ছে বসন্তের কীর্তন। রাগ বসন্ত। তাল বড় দশ কুসি“নওল বসন্ত, নওল বৃন্দাবন, নওলহি রাধাশ্যাম / নওল সখীগণ, সখা সব নব নব, নওল লীলা অনুপম।” সঙ্গে উড়ছে গোলাপি আবির। কুমকুম। নবদ্বীপের মঠ-মন্দিরে শ্রীপঞ্চমীর দিন থেকে এ ভাবেই শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব। দোল পূর্ণিমা পর্যন্ত এখন সব মন্দিরে কীর্তনের রাগ বসন্ত।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় আবির সহযোগে বসন্ত কীর্তনের আসর বসছে। গোলাপি জয়পুরি পাথরে বাঁধানো গোলাকার চত্বর। চারপাশে গন্ধরাজ, কাঠচাঁপা, কামিনী আর গোলাপের ঘেরাটোপ। মাথার উপরে মৃদু আলোর ঝাড়লণ্ঠন। দেওয়াল পিরিচে মোমবাতি। ঠিক মাঝখানে রাখা হয়েছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। রুপোর সিংহাসনে নয়, বিগ্রহ রয়েছে পুষ্পময় বেদিতে। সুগন্ধী ধূপ আর আতর জলের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
শুধু কীর্তনই নয়, মন্দিরে মন্দিরে ঋতুর বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলেজে ভোগ থেকে পোশাকের পারিপাট্যও। বলদেব মন্দিরের কিশোর গোস্বামী বলেন, “অধিবৎ সেবায় সবই বদলে যায়। শীতে বিগ্রহের যে সব ভারী পোশাক তা বদলে যাচ্ছে। ভোগের তালিকায় আসছে তিতোর পদ। উচ্ছে শুক্তো। খিচুড়ি বা নলেনগুড়ের পায়েস, ঘোল, সরবত দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে মরসুমি শাক-সবজি দিয়ে নানা পদ। শেষপাতের নিবেদন ঘরে পাতা সাদা দই।
নব মধুমাসে নিধুবন সাজে। নবদ্বীপ প্রস্তুত বসন্তোৎসবের জন্য। |