|
|
|
|
|
পাচারের দায়ে দশ বছর কারাদণ্ড পাঁচ জনের নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
|
নারী পাচারের দু’টি পৃথক মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ জনকে ১০ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার হলদিয়ার অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সোমনাথ চক্রবর্তীর এজলাসে মামলার নিষ্পত্তি হয়। শুক্রবারই পাঁচ অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এ দিন নকুল বেরা, আশুতোষ রায়, শক্তিপদ গায়েন, বিকাশ ভুঁইয়া ও সইফুদ্দিন গাজিকে ১০ বছর জেলের সাজা শোনান বিচারক। তাঁদের আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে।
এ রাজ্যে হামেশাই নারী পাচারের অভিযোগ ওঠে। বাদ পড়ে না নাবালিকারাও। কখনও বিয়ের টোপ দিয়ে, কখনও বা কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নানা বয়সের মেয়েদের পাচার করা হয়। এদের অধিকাংশের ঠাঁই হয় যৌনপল্লিতে। রাজ্য জুড়েই যৌনপল্লি ও বিভিন্ন হোটেল-রিসর্টের মধুচক্রে মাঝেমধ্যে হানা দেয় পুলিশ। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের উত্তর কাশিমনগরে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের এমনই একটি হোটেলে হানা দিয়েছিল সিআইডি-র দল। উদ্ধার করা হয়েছিল এক নাবালিকা-সহ চার তরুণীকে। হাতেনাতে ধরা পড়েছিল হোটেল ম্যানেজার আশুতোষ রায়-সহ তিন জন। তবে চক্রের মূল পাণ্ডা হোটেল মালিক নকুল বেরা সে দিন পালিয়ে গিয়েছিল। পরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে মাদক পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েন নকুল। ২০১০ সালের ৮মার্চ তাকে ওই নারী পাচারের মামলায় যুক্ত করে সিআইডি। নকুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও ছিল। শুক্রবারই নকুল ও আশুতোষকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তবে ধৃত বাকি দু’জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
অন্য ঘটনাটি ২০১০ সালের ৪ জুনের। সে দিন সিআইডি অভিযান চালিয়েছিল মহিষাদলের তেরপেখ্যার একটি হোটেলে। উদ্ধার করা হয়েছিল চার জন নাবালিকা-সহ ১২ জন তরুণীকে। গ্রেফতার করা হয়েছিল হোটেল ম্যানেজার বিকাশ ভুঁইয়া ও পাচারকারী সইফুদ্দিন গাজিকে। পরে হোটেল মালিক শক্তিপদ আত্মসমর্পণ করে। শুরু হয় মামলার প্রক্রিয়া। দু’টি ক্ষেত্রেই উদ্ধার হওয়া নানা বয়সের মেয়েরা সাক্ষী দিয়েছে। তার ভিত্তিতে সাজা পেয়েছে অভিযুক্তেরা। দু’টি মামলারই সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অমল ওঝা। তিনি বলেন, “২০০৯ সালের মামলায় উদ্ধার হওয়া আট জন তরুণী এবং ২০১০ সালের মামলায় তিন জন তরুণী জবানবন্দির ভিত্তিতে সাজা দিয়েছেন বিচারক।” উদ্ধার হওয়া এই সব মেয়েদের সাক্ষ্যগ্রহণের ব্যবস্থা করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার তরফে সপ্তর্ষি বিশ্বাস বলেন, “আমরা নানা ভাবে ওই মেয়েদের ঠিকানা খুঁজে, তাঁদের বুঝিয়ে মামলায় সহযোগিতার বন্দোবস্ত করি। কারণ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এই ব্যবসা বাড়বেই।” এ দিনের রায়ের পর ওই সব কিশোরী-তরুণীরা খুশি বলে সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
শিল্পশহর হলদিয়া গড়ে ওঠার সময় থেকেই যৌন ব্যবসা ছড়িয়েছে। শিল্পনগরীর অদূরে মহিষাদলে, মূলত হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একাধিক হোটেল-রিসর্টে নিত্য এমন আসর বসে। ট্রাকের চালক-খালাসি থেকে বিভিন্ন শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিদের আনাগোনা এখানে। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কেরও হাসাপতাল মোড়েও রয়েছে যৌনপল্লি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নন্দীগ্রাম, হাওড়া থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েদের এখানে নিয়ে আসা হয়। তবে এই সব ধরপাকড় সত্ত্বেও যৌন ব্যবসায় খুব একটা ভাটা পড়েনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাপাসএ্যড়ায় তিনটি হোটেলে এখনও ব্যবসা চলছে। আর হাসপাতাল মোড়ের পাঁচটি বাড়িতে চলছে যৌনপল্লি।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার করা হয় মেয়েদের। গত বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে হাসপাতাল মোড়ের যৌনপল্লি থেকে ৩৬ জন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হয় ২৫ জন। সেই মামলাও চলছে। |
|
|
|
|
|