|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যেতে ভরসা নেই শিলাদিত্যর |
কিংশুক গুপ্ত • বিনপুর |
প্রশ্ন করলে কেন আটক করা হবে? আবারও এই প্রশ্ন তুললেন জঙ্গলমহলের ‘প্রতিবাদী যুবক’ শিলাদিত্য চৌধুরী।
রবিবার মহেশতলায় পুরমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে রাজরোষে পড়েন স্থানীয় যুবক প্রতাপ নস্কর। পুলিশ তাঁকে আটক করে। প্রতাপের কথা টিভি দেখে জেনেছেন শিলাদিত্য। তারপরই জঙ্গলমহলের এই যুবকের জিজ্ঞাসা, “প্রশ্ন করলে কেন আটক করা হবে? প্রতাপবাবু তো কোনও দোষ করেননি।”
বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করে গত বছর অগস্টে জেলে গিয়েছিলেন শিলাদিত্য। মাওবাদী তকমা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই স্মৃতি এখনও দগদগে। কাল, মঙ্গলবার বিনপুরে প্রশাসনিক জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে সভাস্থল। তবে সেখানে যাবেন না বলেই আপাতত ঠিক করেছেন এই যুবক। শিলাদিত্যর কথায়, “পড়শিরা বলছেন, মঙ্গলবার সভায় যেতে। তবে মহেশতলায় প্রতাপ নস্করের ঘটনাটি জানার পর আর বিনপুরে সভায় যাওয়ার ভরসা পাচ্ছি না।”
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে শিলাদিত্য এখন পরিচিত মুখ। ট্রেনে-বাসে লোকজন চিনতে পেরে হাত মেলান। কেউ আবার পিঠ চাপড়ে দেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভামঞ্চেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এ সবের জেরে শিলাদিত্যর দারিদ্রের জীবন কিন্তু বিন্দুমাত্র বদলায়নি। বিনপুরের লোয়াগা গ্রামে মাটির বাড়িটা বেআব্রু ভাবে ভেঙে পড়েছে কদিন আগে। সারানোর সামর্থ নেই। তাই পাশেই কাকার বাড়ির একটি ঘরে স্ত্রী ও নাবালক ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন তিনি। শিলাদিত্য পেশায় দৈনিক আশি টাকা মজুরির বাসকর্মী। রবিবার ও ছুটির দিন বাদে রোজ সকালে ঝাড়গ্রাম মুখ্য ডাকঘর থেকে ডাক চিঠির ব্যাগ আনা-নেওয়া করতে হয়। যে দিন কাজ, সে দিন মজুরি। শিলাদিত্যর কথায়, “বছর দু’য়েক আগে যক্ষ্মা হওয়ার পর বাস মালিক আমাকে ভারী কাজের পরিবর্তে মেল ব্যাগ আনা-নেওয়ার কাজ দিয়েছেন।” এই মজুরির বাইরে সম্বল এক বিঘে জমি। তাতে ধান ও মরসুমি চাষ করেন। এখন যেমন তিল চাষ করছেন।
এই চাষি শিলাদিত্যই ২০১২ সালের ৮ অগস্ট বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। ১০ অগস্ট পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীন ‘হাই সিকিউরিটি জোন’-এ অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে পনেরো দিন জেল খাটতে হয়। তবে সেই সব দিনের কথা ভুলতে চান শিলাদিত্য। তাঁর কথায়, “বেলপাহাড়ির ওই সভায় সারের দাম নিয়ে দিদিকে কিছু বলার জন্য চেঁচিয়ে অনুরোধ করেছিলাম। তারপর যা ঘটেছে সেই দুঃস্বপ্ন ভুলতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী গুরুজন। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার ঔদ্ধত্য আমার নেই।”
তবে কোথাও একটা অভিমান আছে। বিনপুরের সভায় কৃষকদের ক্রেডিট কার্ড বিলি করা হবে। দেওয়া হবে কৃষি সরঞ্জাম। সে কথা জেনে শিলাদিত্যর প্রতিক্রিয়া, “আমিও তো চাষ করি। আমার কথা কী উনি ভাববেন না?” সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শিলাদিত্যের আর্জি, “আমার বিরুদ্ধে মামলাটি (মামলার চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে) প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।” শিলাদিত্যের মা সন্ধ্যাদেবীও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অনেক বড় মাপের মানুষ। উনি আমার ছেলেকে কলঙ্কমুক্ত করুন এটাই আমার আবেদন।” |
|
|
|
|
|