|
|
|
|
শব্দবিধি রক্ষায় কৌশলী প্রশাসন |
উচ্চ মাধ্যমিকের মধ্যেই বিনপুরে মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম |
কাল, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকা বিনপুরে প্রশাসনিক জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে ৫৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস করা হবে। তবে এর বেশিরভাগই পূর্ব মেদিনীপুরের প্রকল্প। প্রশাসন জানিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রকল্পের সংখ্যা ১৩টি। আর পূর্ব মেদিনীপুরের প্রকল্প রয়েছে ৩৬টি। প্রায় তিনগুণই বলা যায়! তবু কেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে সভা? প্রশ্ন উঠছে।
আরও একটি প্রশ্ন উঠছে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। মঙ্গলবারও পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সর্বত্র মাইক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কি আইন ভেঙেই মুখ্যমন্ত্রীর সভা হবে? জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে আইন মানতে কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। কী সেই কৌশল? জানা গিয়েছে, সভাস্থল ঘিরে দেওয়া হবে। মাইকের পরিবর্তে নিয়ে বসানো হবে বক্স। থাকবে শব্দসীমা পরিমাপের যন্ত্রও। যাতে বক্সের আওয়াজ শব্দবিধি ভেঙে সভাস্থল থেকে না বেরোতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “আইন যেমন রয়েছে তেমন তার ফাঁকও রয়েছে। সেই ফাঁক গলেই সভার আয়োজন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা বলে কথা। ত্রুটিমুক্ত আয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদারও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর সভা যখন আইন রক্ষা করে আয়োজন হবে।” |
|
চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
তবে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সোমবার সন্ধেয় ঝাড়গ্রাম পৌঁছনোর কথা মুখ্যমন্ত্রীর। রাতে থাকবেন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে। পরদিন সকালে যে পথে তিনি বিনপুর যাবেন, তার দু’পাশে একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সভাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আসার জন্য রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ হবেই। তার জেরে পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বেন বলেই আশঙ্কা। মুখ্যমন্ত্রীর সভার সময় বেলা বারোটা। আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে ১০টায়। মাঝে দু’ঘণ্টার ব্যবধান থাকলেও ওই দিন সকাল থেকেই রাস্তাঘাট পুলিশের দখলে চলে যাবে বলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মনে করছেন।
৫ নম্বর রাজ্য সড়কের ধারে এক রায়তি জমিতে সভা হবে। ওই জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। এখন চলছে তা সমতল করার কাজ। ম্যারাপ বাঁধার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে দলীয় প্রচারের উদ্দেশ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশাসনিক জনসভা বলে বিরোধীদের অভিযোগ। সেই সঙ্গে পরীক্ষার মধ্যে কেন সভা সে প্রশ্নও তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। |
সংখ্যালঘু এলাকার উন্নয়নে এল বরাদ্দ |
|
• ব্লক কেশপুর, গড়বেতা ১ ও ৩ এবং মেদিনীপুর সদর |
• প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল ৬ কোটি টাকার |
• প্রথম ধাপে এসেছে ৪ কোটি টাকা |
প্রস্তাবিত প্রকল্প |
৪০টি অঙ্গনওয়াড়ি, ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিভিন্ন স্কুলে ১৬টি অতিরিক্ত ক্লাসরুম, ৪টি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প,
২৮টি অগভীর নলকূপ, ৮টি কমিউনিটি টিউবওয়েল ও ৬১টি সাধারণ নলকূপ। |
সমস্যা |
এই টাকা খরচ হলে তবেই বাকি টাকা দেবে রাজ্য। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকায় চলতি
আর্থিক বছরে এই টাকায় কাজ করা সম্ভব হবে না বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। |
২০১২ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাদ্রাসার ছাত্রীদের জন্য মোট ৩২ লক্ষ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা
বরাদ্দ এসে পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। |
উন্নয়নের পরিকল্পনা আগে থেকেই করা রয়েছে। বরাদ্দ অর্থে
দ্রুত প্রকল্প রূপায়নে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়
জেলা সংখ্যালঘু দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক |
|
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কটাক্ষ, “জঙ্গলমহলের মানুষ তো ভাগ্যবান। প্রায় প্রতি মাসেই মুখ্যমন্ত্রী এখানে আসছেন। তবে তাতে কী লাভ হচ্ছে সেটা প্রশ্ন। ওঁর আসার জন্য পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হওয়াটাও কাম্য নয়। এ নিয়ে অবশ্য কিছু বলার নেই। কারণ উনি যা করবেন সেটাই গণতন্ত্র, আর কেউ কিছু বললে সেটা ষড়যন্ত্র।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দুবেও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার এলেও তাঁর দলের লোকজন সংযত হচ্ছেন না। মিথ্যে মামলায় বিরোধীদের ফাঁসানো হচ্ছে।”
একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস, উদ্বোধন থেকে নানা ধরনের সরঞ্জাম বিলি, সবই হবে বিনপুরের সভামঞ্চ থেকে। পূর্ব মেদিনীপুরের ২২টি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরা গভর্নমেন্ট কলেজ, ১২টি জলপ্রকল্প, পিছাবনি খাল, নারাদাড়ি খাল-সহ একাধিক খালের উপর সেতু নির্মাণ, দিঘার সমুদ্র উপকূলের রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্যায়ন প্রভৃতি। এর জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পূর্ব মেদিনীপুরের যে ১৪টি প্রকল্পের কাল উদ্বোধন হবে তার মধ্যে রয়েছে তালদা, গোবিন্দনগর, মুরাদপুর-সহ ১০টি জলপ্রকল্প, রামনগরে খালের উপর সেতু, খেজুরির আমদাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নয়ন প্রভৃতি। এই সব প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের জেনকাপুর, বিনপুর-১ ব্লকের নেতাই, বিনপুর-২ ব্লকের শিমুলপাল ও শালবনির কলাইমুড়ি জলপ্রকল্প ও ৫টি গার্লস হস্টেলের উদ্বোধন করা হবে। আর শিলান্যাস হবে দাঁতন-২ ব্লকে নতুন কলেজ, ঝাড়গ্রাম ও বিনপুর-২ ব্লকে কিষান মাণ্ডি এবং মেদিনীপুর সদর ব্লকে ‘কমন ফেসিলিটি সেন্টার আন্ডার ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর। ওই অনুষ্ঠানে চাষিদের পাওয়ার টিলার, পাম্পসেট, ট্রাক্টর-সহ নানা কৃষিযন্ত্র বিতরণ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। দেওয়া হবে কৃষিরত্ন পুরস্কার, কিষাণ ক্রেডিট, বিআরজিএফে বাড়ি তৈরির অর্থ, শিল্পীদের ক্রেডিট কার্ড ও স্বাস্থ্য কার্ড। |
|
|
|
|
|