|
|
|
|
গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জের, অভিযোগকারী তৃণমূল নেতাকেই ধরল পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
শাসকদলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছল পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে। কোন্দলের দেরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে থানায় গেলেন দলেরই খেতমজুর সংগঠনের নেতা। অথচ পুলিশ তাঁর অভিযোগ না নিয়ে উল্টে অভিযোগকারী নেতাকেই গ্রেফতার করল।
তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে দলেরই শাখা সংগঠনের অফিস, দোকান ভাঙচুর এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস সরকার। শনিবার রাতে ওই হামলা হয় এবং তাপসবাবুর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। তাপসবাবু কিষাণ খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য। কিন্তু তাঁর এবং স্ত্রীর অভিযোগ পুলিশ নিতে চায়নি। উল্টে শনিবার রাতে তাপসবাবুকেই আটক করে নয়াগ্রাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারা রাত থানায় বসিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাপসবাবুকে। রবিবার ঝাড়গ্রামের এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত অবশ্য তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পুলিশকর্তারা মন্তব্য করতে চাননি। |
|
ধৃত তাপস সরকার। —নিজস্ব চিত্র। |
তাপসবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর দলেরই নেতার অঙ্গুলি হেলনে যে অসম্মান জুটল, তাতে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। উচ্চ নেতৃত্বের কাছে সুবিচার চেয়েছি।” অন্য দিকে তাপসবাবু তৃণমূলে আছেন বলেই মানতে চাননি উজ্জ্বলবাবু। তাঁর বক্তব্য, “তাপস সরকার কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিক কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” যদিও তৃণমূলের ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু পাত্র জানান, তাপসবাবু কিষাণ খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য। তাপসবাবুকে দলের লোক বলে মানেনি কংগ্রেসও। দলের ঝাড়গ্রাম মহকুমা সভাপতি প্রসূণ ষড়ঙ্গীর মতে, “ওই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের পরিণাম।” কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তর সঙ্গে ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু পাত্রর মন কষাকষি চলছে। মাস তিনেক আগে অর্ধেন্দুবাবু কিষাণ খেতমজুর সংগঠনের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পান। তার পর থেকেই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে গোলমাল লেগে রয়েছে। কিছু দিন আগে অর্ধেন্দুবাবুর ডাকা খেতমজুর সংগঠনের বৈঠকে যাওয়ায় দলের এক মহিলা কর্মীকে নিগ্রহ করে উজ্জ্বল অনুগামীরা। পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু মুখিকেও পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে উজ্জ্বলবাবু অপমান করেন বলে অভিযোগ।
তাপসবাবু এলাকায় অর্ধেন্দু-অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। তার জেরেই হামলা বলে অভিযোগ। তাপসবাবু বলেন, “শনিবার একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডাকেন উজ্জ্বলবাবু। সন্ধে সাতটা নাগাদ দলের কিছু লোক আমার দোকানে চড়াও হয়ে আমাকে জোর করে ওই বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমার স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাঁর শাড়ি ও ব্লাউজ ছিঁড়ে দেওয়া হয়। লোক জন জড়ো হয়ে যাওয়ায় হামলাকারীরা তখনকার মতো চলে যায়। তবে রাত ন’টা নাগাদ ফের উজ্জ্বলবাবুর নেতৃত্বে জনা তিরিশেক লোক এসে দোকানে ভাঙচুর চালায়। কিষাণ খেতমজুর সংগঠনের ব্লক কার্যালয়েও ভাঙচুর-লুঠপাট চলে।” এর পর শুরু হয় পুলিশি হেনস্থা। তাপসবাবুর স্ত্রী থানায় অভিযোগ জানাতে যান, কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তত ক্ষণে উজ্জ্বলবাবুর লোক জনও থানায় পৌঁছে যান। রাত দশটা নাগাদ তাপসবাবুকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। সারা রাত তাঁকে থানায় বসিয়ে রেখে রবিবার গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। |
|
|
|
|
|