বিপন্ন শিক্ষার অধিকার
স্যারের টেবিলের নীচে ঠাঁই পড়ুয়াদের
ক্লাসঘরটি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বড়ো জোর ১২ ফুট বাই ১০ ফুট। বসার জায়গা হয় বড়জোর ২০ জনের। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৪। বেশ কিছু ছাত্রকে তাই শিক্ষকের টেবিলের তলায় ঢুকে পড়তে হয়। সারাদিন থাকতে হয় ঘাড় কাত করে।
মেদিনীপুর শহরের ‘অলিগঞ্জ কসাইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এমন ভাবেই চলছে গত ২৩ বছর। তিনজন স্থায়ী শিক্ষক তিন, একজন পার্শ্বশিক্ষকের বসার চেয়ার, তিনটি আলমারি, একটি টেবিল নিয়ে ঠাসাঠাসি ঘরটিও অবশ্য স্কুলের নিজস্ব নয়। ভাড়ার ২০০ টাকা দেয় সরকার, আর ১০০ টাকা দেন শিক্ষকরাই। স্কুলের নিজস্ব জমি না থাকায় নেই শৌচালয়, নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। পানীয় জল বিশুদ্ধ করার একটি যন্ত্র থাকলেও তাতে থাকে না জল। কারণ, স্কুল শুরুর আগেই পুরসভার টাইম কলের জল চলে যায়।
অনেক স্কুলের ছাত্রদের অবশ্য ঘরও জোটে না। যেমন, ঘাটাল শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্লাস চলে পাড়ার বারোয়ারি আটচালাতে। সেখানে কোথায় পানীয় জলের ব্যবস্থা, কোথায়ই বা শৌচালয়।
চলতি মার্চ মাসের মধ্যেই এ রাজ্যে শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি স্কুলে যথাযথ পরিকাঠামো থাকা আবশ্যিক। অথচ বাস্তব হল পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু প্রাথমিক স্কুলেই পড়াশোনার ন্যূনতম পরিকাঠামোও নেই।
কোথাও মেঝেয় জায়গা নেই, কোথাও মন্দিরের আটচালায় সব ক’টা ক্লাস
মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ কসাইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় (বাঁ দিকে)
ও ঘাটালের কোন্নগরে কৃতার্থময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৌমেশ্বর মণ্ডলের ছবি।
কেন এমন দশা?
অলিগঞ্জ কসাইপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানস চক্রবর্তীর যুক্তি, “স্কুলের নিজস্ব জমি নেই। তাই ক্লাসরুমের জন্য বরাদ্দ মেলেনি। একই কারণে শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা যায়নি।” তবে স্কুলের নিজস্ব জমি চেয়ে এ বার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। উদ্যোগী হয়েছেন মেদিনীপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান কাউন্সিলেরর স্বামী নাজিম আহমেদও। তাঁর আশা, এ বার ভোল পাল্টাবে স্কুলের।
কিন্তু কবে? এত দিনে স্পষ্ট যে, শিক্ষার অধিকার আইন বলবত্‌ হওয়ার পরেও অনেক দিন তা কেবল খাতায়-কলমে রয়ে যাবে অলিগঞ্জ কসাইপাড়া, গোয়ালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অনেক স্কুলে।... সূত্রে খবর, জেলায় ৬৮টি স্কুল চলছে মাত্র একটি ক্লাসরুম সম্বল করে। কোনও ক্লাসরুম নেই, এমন কোনও স্কুল খাতায়-কলমে নেই। কিন্তু গোয়ালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো বেশ কিছু স্কুল কার্যত ঘরহীন, প্রকাশ্য আটচালায় পড়াশোনা চলে, তা সরেজমিনে দেখলেই বোঝা যায়।
নতুন তৈরি উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলির ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর সমস্যা সবচেয়ে বেশি। বেশির ভাগ স্কুলেই নেই পাঁচিল। ফলে স্কুল চত্বরে অবাধে ঢুকে পড়ে ছাগল, কুকুর, গরুও। এর জেরে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে। যদিও প্রশাসনের দাবি, রাস্তার ধারের বেশির ভাগ স্কুলেই পাঁচিল দেওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইনে স্কুলের পরিকাঠামো সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা রয়েছে। সেখানে বলা আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন থাকবে, ৩০:১ আনুপাতিক হারে ছাত্র-শিক্ষক থাকবেন, স্কুলের ভবন তৈরি করা হবে উপযুক্ত পরিবেশে, পাঁচিল দিয়ে স্কুল ঘিরতে হবে, ১০০ জনের বেশি ছাত্র থাকলে একজন প্রধান শিক্ষক রাখতে হবে, খেলার মাঠ থাকবে, শৌচালয় ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতেই হবে। সেই সব শর্ত পূরণ হবে কে, জেলার পড়ুয়ারা এখন তারই অপেক্ষায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.