এক দশকের ব্যবধানে, মণিপুরের কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যানে সাঙ্গাই হরিণ বা নাচুনে হরিণের (ব্রো অ্যান্টলার্ড ডিয়ার) শুমারি হল। আশার কথা, হরিণের সংখ্যা বেড়েছে বলেই প্রাথমিক ধারণা বন বিভাগের। পাশাপাশি আশঙ্কা, একই পরিবারের মধ্যে বারংবার যৌন ক্রিয়া চলায় সাঙ্গাইয়ের বর্তমান প্রজন্ম আকারে ছোট হয়ে গিয়েছে। কমে গিয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
১৯৫৩ পর্যন্ত নাচুনে হরিণকে বিলুপ্ত ধরা হত। পরে কেইবুলের তৃণভূমিতে দেখা মেলে। বর্তমান বিশ্বে এটিই সাঙ্গাইয়ের এক মাত্র প্রাকৃতিক আবাস। ১৯৭৫ সালের শুমারিতে কেইবুল লামজাওতে মাত্র ১৪টি সাঙ্গাইয়ের সন্ধান মিলেছিল। ২০০৩ সালে শেষ বার এখানে সরকারি ভাবে সাঙ্গাই শুমারি হয়। তখন সংখ্যাটি ছিল ১৮০। |
সাঙ্গাই বা নাচুনে হরিণ। লোকটাক হ্রদের ধারে।—নিজস্ব চিত্র |
এরপর ৪০ বর্গ কিলোমিটারের কেইবুল লামজাও জঙ্গল ঘিরে থাকা ২৪৬ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত লোকটাক হ্রদের অনেকাংশের দখল চলে যায় জঙ্গিদের হাতে। ২০০৮ থেকে ২০১১ অবধি সেনা বাহিনী ও আধা সেনার সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত ছিল কেইবুল ও লোকটাক। বিস্ফোরণে পুড়ে যায় বহু ফুমদি (ভাসমান তৃণভূমি)। আর গণনাও সম্ভব হয়নি। ২০০৬-এ ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া সাঙ্গাই শুমারি চালালেও তাদের তথ্য (৬০ থেকে ১০০টি সাঙ্গাই) রাজ্য সরকার বিশ্বাস করেনি। সেই ফলও সরকারি ভাবে প্রকাশিত হয়নি। বুধবার দেশের এক মাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান কেইবুল লামজাওতে সরকারি ও পশুপ্রেমী সংগঠনের শুমারি কর্মীদের ৩০টি দল সাঙ্গাইয়ের সন্ধান চালান। মুখ্য বনপাল কে আঙ্গামি, বনপাল টি মহেন্দ্রপ্রতাপ, উপ-বনপাল এল জয়কুমার ও তিনটি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার শুমারির কাজ তদারক করেন। মহেন্দ্রপ্রতাপ জানান, শুমারি থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য ও সাঙ্গাইদের সঙ্গে মুখোমুখি মোলাকাতের ঘটনায় মনে হচ্ছে সাঙ্গাইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। এ দিন সাঙ্গাই ছাড়াও উদ্যানে হগ ডিয়ার ও বুনো শুয়োরের সংখ্যাও গণনা করা হয়। তবে ৩০টি দলের পুরো তথ্য হাতে আসতে ও চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণে সময় লাগবে। শুমারি কর্মী তথা সাঙ্গাই বিশেষজ্ঞ সামুনগৌ জানান, সীমিত পরিসরে কম সংখ্যায় দীর্ঘদিন থাকার ফলে সাঙ্গাইরা নিজের পরিবারের মধেই যৌন ক্রিয়া বাড়াচ্ছে। একই বংশের ভিতরে সঙ্গম ও বংশবৃদ্ধির কারণে তাদের আকার ছোট হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার। সাঙ্গাইপ্রেমীদের দাবি, বাঘ সংরক্ষণের ধাঁচেই সাঙ্গাই সংরক্ষণে কেন্দ্র বিশেষ বিজ্ঞানসম্মত নীতি গ্রহণ করুক। |