চোরাশিকার বন্ধ করতে শুধু সরকারি স্তরে নজরদারি নয়, জঙ্গলের অধিবাসীদের মধ্যে সচেতনতার প্রসার এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টি-ও জরুরি। শুক্রবার কলকাতায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানে এমন কথাই শোনা গিয়েছে কেরল, মধ্যপ্রদেশ-সহ দেশের একাধিক রাজ্যের বনকর্তাদের মুখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বন্যপ্রাণীর মধ্যে চোরাশিকারিদের অন্যতম লক্ষ্য বাঘ। আর সেই বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেই এমন পথ বেছে নিয়ে সাফল্য মিলেছে বলে বনকর্তাদের অভিমত। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য হল কেরলের পরম্বিকুলম ও মধ্যপ্রদেশের কানহা। তাদের দুই প্রাক্তন অধিকর্তার দাবি, এই ব্যবস্থা চালু করেই চোরাশিকার আটকাতে পেরেছেন তাঁরা। |
পুরস্কার হাতে রামকুমারের ছেলে ও মেয়ে। —নিজস্ব চিত্র |
পরম্বিকুলম ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রাক্তন অধিকর্তা সঞ্জয়ন কুমার বলেন, “জঙ্গলের ভিতরে যে সব জনজাতি বসবাস করে, তাদের বন সংরক্ষণের কথা বোঝাতে হবে। জঙ্গল থেকে তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও ভাবা জরুরি।” অনেক ক্ষেত্রেই বন ও প্রাণী সংরক্ষণের কাজে লাগানো হয় তাঁদের। শেখানো হয় পরিবেশ দূষণ রোধের বিষয়টিও। পরম্বিকুলম ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্য কর্তারা জানান, জঙ্গলে প্ল্যাস্টিক বিরোধী প্রচার চালিয়ে দূষণও কমিয়েছেন তাঁরা।
কী ভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে? এক বনকর্তার কথায়, “বন্যপ্রাণী মারা খারাপ, এ কথা যেমন বোঝাতে হবে, তেমনই জঙ্গলের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে গেলে কী কী করা যাবে না, সেটাও ওই অধিবাসীদের বলা প্রয়োজন।” এটা করতে গিয়ে অনেক সময় বিপদেও পড়েন বন দফতরের অফিসারেরা। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল কানহা অভয়ারণ্যের প্রাক্তন অধিকর্তা হিম্মত সিংহ নেগির ক্ষেত্রে। জঙ্গলের ‘কোর এরিয়া’র মধ্যে থাকা একশোরও বেশি খাটাল সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেই কারণে জঙ্গল মাফিয়াদের কাছ থেকে খুনের হুমকিও পেয়েছিলেন হিম্মত সিংহ। কিন্তু তাতে দমে যাননি তিনি। আর সেই কাজের সুফল কৃষ্ণকুমার টেকম ও যোধা সিংহ বাইগা। দু’জনের বাড়িই কানহা অভয়ারণ্যের ভিতরের একটি গ্রামে। বনকর্তারা বলছেন, কানহায় বন ও প্রাণী সংরক্ষণে অন্যতম দুই স্তম্ভ এই দু’জন। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রদেশের পালপুর-কুনো অভয়ারণ্যের বাসিন্দা রামকুমার আদিবাসী চোরাশিকার রুখতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। রামকুমারের অবদানের জন্য শুক্রবারের অনুষ্ঠানে তাঁর ছেলে-মেয়ের হাতে পুরস্কারও তুলে দেন উদ্যোক্তারা।
দেশের অন্য অভয়ারণ্য যদি পারে, তা হলে সুন্দরবনেও কি এমন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না? রাজ্যের এক বনকর্তা ও সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের প্রাক্তন ফিল্ড ডিরেক্টরের দাবি, “বছর দশেক আগে থেকেই সুন্দরবনে এমন ব্যবস্থা চালু রয়েছে।” এই ব্যবস্থায় যে সুফল মেলে, তা মেনে নিয়েছেন তিনিও। |