|
|
|
|
সমর্থন তোলার হুমকি করুণার
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তামিল ভোট ঝুলিতে পুরতে মনমোহন-সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে পুরোপুরি ইতি টানার হুমকি দিলেন ডিএমকে-সুপ্রিমো করুণানিধি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান না নিলে ইউপিএ-সরকার থেকে দলের মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার হুমকি আগেই ছিল। আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে করুণানিধি বলেছেন, তাঁর দাবি মানা না হলে তিনি ইউপিএ জোট ছাড়বেন। সমর্থনও প্রত্যাহার করবেন। এ কথা জানিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধীকে চিঠিও লিখেছেন।
ডিএমকে-নেতৃত্বের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমেরিকা যে প্রস্তাব আনতে চলেছে, তাকে আরও কঠোর করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনুক নয়াদিল্লি। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ভারত আন্তর্জাতিক স্তরের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিক। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ঘরোয়া রাজনীতির দোটানায় এ বিষয়ে এখনও মনস্থির করতে পারেনি মনমোহন-সরকার। দিল্লির সূত্র বলছে, ইউপিএ-র পক্ষে যেমন লোকসভা ভোটের আগে ডিএমকে-কে হারানো সম্ভব নয়, তেমনই দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়াও কঠিন। ডিএমকে সমর্থন তুললে সরকার হয়তো পড়বে না, কিন্তু লোকসভা ভোটে দক্ষিণে এক জন গুরুত্বপূর্ণ শরিক হারাবে কংগ্রেস। আবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারত কঠোর হলে তাদের সঙ্গে সখ্য নষ্ট হবে। ফলে সেখানে চিনা প্রভাব বিস্তারের সমূহ সম্ভাবনা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সনিয়া গাঁধীর বাসভবনে এ দিন আলোচনায় বসেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার আগে করুণানিধিকে শান্ত করতে বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ বলেন, “রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া হবে কি না, তা ডিএমকে-র সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।” দিল্লি যে শ্রীলঙ্কার ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের পক্ষে, তা-ও জানিয়েছেন তিনি।
করুণানিধি এর আগেও একাধিক বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর দলের প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু আজ যে ভাবে তিনি জোট ভাঙার কথা বলেছেন, তাতে কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্বেগ বেড়েছে। চেন্নাইতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রী-সনিয়াকে লেখা চিঠি প্রকাশ করে করুণানিধির মন্তব্য, “আমি বলেছিলাম রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে সংশোধনী না আনা হলে আমাদের জোটে থাকা অর্থহীন। এখন আমি বলছি আমরা নিশ্চিত ভাবেই জোটে থাকব না।” কংগ্রেস নেতৃত্বকে তিনি জানান, আশাহত হয়েই তাঁকে এই চিঠি লিখতে হচ্ছে। ডিএমকে-নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেস তথা ইউপিএ-নেতৃত্বকে করুণানিধির বাধ্যবাধকতা বুঝতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস এখনও এ নিয়ে উদাসীন। করুণানিধি আজ নিজেই জানিয়েছেন, দলের মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পরেও দিল্লি থেকে কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
তামিল রাজনীতির বড় অংশ মনে করছে, কেন্দ্রের শরিক হয়েও শ্রীলঙ্কার তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ডিএমকে-র বিরুদ্ধে নীরব থাকার অভিযোগ উঠেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই করুণানিধি নিজের ভাবমূর্তি মেরামত করতে চাইছেন। ক্যাবিনেটে ডিএমকে-র মাত্র এক জন সদস্য রয়েছেন। বাকি চার জনই প্রতিমন্ত্রী। ইউপিএ-সরকারের প্রথম জমানা থেকেই ডিএমকে কেন্দ্রের শরিক। এখন লোকসভা ভোটের এক বছর আগে সরকার থেকে সরে দাঁড়ালেও ডিএমকে-র বিশেষ কোনও ক্ষতি নেই। বরঞ্চ শুধু তামিলদের স্বার্থে তাঁরা কেন্দ্রের ক্ষমতা ছেড়ে চলে এসেছেন, এ কথা বলে ডিএমকে নৈতিক অবস্থান নিতে পারবে। উল্টো দিকে দিল্লি যদি আমেরিকার প্রস্তাবকে সমর্থন করে, তা হলে তার পুরো কৃতিত্বটাই নেবেন করুণানিধি। বলবেন, তাঁদের চাপেই মনমোহন-সরকার বাধ্য হয়েছে। |
|
|
|
|
|