এ যেন অনেকটা ভাত জোটে না, কেক খাওয়ার মতোই।
টাকার অভাবে কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। পেনশন দিতেও হিমশিম। পরপর প্রকল্প ঘোষণা করে বাস্তবায়িত হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সরঞ্জাম কেনার টাকা নেই। তবুও ট্রামের জাদুঘর তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)। চলছে এসপ্ল্যানেড ট্রাম গুমটি
সাজানোর প্রস্তুতিও।
সিটিসি-র শ্রমিকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ছ’হাজার। পেনশনভোগী ৯৫০-এর মতো। কর্মীদের অক্টোবরের বেতন হয়েছে ২০ নভেম্বর। নভেম্বরের বেতন কবে হবে, কেউ জানেন না। পেনশন বকেয়া সেপ্টেম্বর, অক্টোবরের।
কেন এই হাল? কর্তৃপক্ষের হিসেবে, “মাসে বেতন দিতে লাগে সাড়ে দশ কোটি টাকা। পেনশনে আরও প্রায় ৮৩ লক্ষ। টিকিট বিক্রির আয় মাত্র সাড়ে বারো লক্ষের মতো। অর্থ দফতর বাড়তি টাকা বরাদ্দ না-করলে আমরা অসহায়!”
তা হলে কেন চমক দেওয়ার মতো ঘোষণা হচ্ছে একের পর এক? এসি ট্রাম, ট্রামে ব্যাঙ্কোয়েট ও রেস্তোরাঁর ঘোষণা হয়েছে কয়েক মাস হয়ে গেল। স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষে বিশেষ ট্রাম তৈরির কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈনের যুক্তি, “চমক নয়। পরিত্যক্ত কিছু ট্রামে এ সব ব্যবস্থা করব। প্রথমটা ফেব্রুয়ারিতে পথে নামানোর চেষ্টা করব। পরেরটা এপ্রিলে।” আর, বিশেষ ট্রাম? “আমরা ২ ফেব্রুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষ পালন করব। তার মধ্যে ওই ট্রাম তৈরি হয়ে যাবে।” কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এর জন্য বেতনে হাত পড়বে না। যোজনা-খাতে বরাদ্দ থেকেই কাজ হবে।
কর্তৃপক্ষ যা-ই দাবি করুন, ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যোজনা-খাতে বরাদ্দ হয় সাড়ে বারো কোটি টাকা। এই সময়ের ৭৫ শতাংশ কাটলেও মিলেছে মাত্র ৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। ফলে জরুরি সরঞ্জামের সিংহভাগই কেনা যাচ্ছে না। সিটিসি-র সিটু-সমর্থিত কর্মী-সংগঠনের সম্পাদক সুবীর বসু বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১২০০ কর্মীর প্রায় ৯০০ জন হাত গুটিয়ে বসে। অচল বাস-ট্রামও সারানো যাচ্ছে না।” এসপ্ল্যানেডের ট্রাম গুমটি সাজানো ও জাদুঘর তৈরির টাকা কে দেবে? সিটিসি-র চেয়ারম্যানের বক্তব্য, “পরিবহণ দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ওঁরা অর্থের সংস্থান করলে তবেই হবে।” কোথা থেকে টাকা আসবে? যেখানে বেতন ও পেনশন ঠিক মতো মিলছে না? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের ব্যাখ্যা, “আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। টাকা পাচ্ছেন না, কথাটা একেবারেই ভিত্তিহীন। সতর্ক ভাবে অর্থ বরাদ্দে একটু সময় লাগছে মাত্র।” |