|
|
|
|
শীত, সচিনের টানে কাটল অলস রবিবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
বড়দিনের আগের রবিবারটি ধরা থাকে পিকনিক, পর্যটকদের উপছে পড়া ভিড় আর কেক-পেস্ট্রির জন্য। কিন্তু সেই বরাদ্দ চলে গেল বাদলা দিনের মতো। ঘরে ঘরে খিচুড়ির গন্ধ। দিন ভর কুয়াশা মাখা শহর পড়ে রইল জবুথবু হয়ে। কুয়াশার আচ্ছাদন ঢেকে দিল পিকনিকের ইচ্ছা বা পর্যটনের আনন্দ। গোটা দিনটাই যেন পড়ে রইল সকালেই। যে দিনের কোনও দুপুর বিকেল নেই। সকালের পরেই ঝপ করে পড়ে সন্ধ্যা।
আর তখন শীতের সন্ধ্যায় জমাটি আলোচনা শুরু হয়ে গেল সচিন তেন্ডুলকরের এক দিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে। সেই আলোচনা গড়িয়েছে ঢিমেতালে চলা দিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কিছু কিছু ক্লাবঘর খোলা ছিল। সেখানে জমিয়ে চলেছে সচিন-চর্চা। একই কথা আলোচনা হয়েছে চায়ের দোকান থেকে ঘরোয়া আসরে। তাতেই কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছে দিন।
সেই সঙ্গে দোসর ছিল অফিস-কলেজ-স্কুল না যাওয়ার আমেজ। সকালের দিকে একটু যেন মনে হচ্ছিল অজানা কোনও বন্ধই বোধহয় শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজন নিতান্তই কম। গাড়িঘোড়া আরও কম। দুপুর পৌনে একটার সময়ে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে হাওয়া থেকে কাটোয়াগামী একটি লোকাল থেকে নেমে খেয়াঘাটে যাওয়ার জন্য একটা রিকশা মেলা ভার হয়ে গিয়েছিল। রিকশাস্ট্যান্ডে ভরদুপুরে কাঠকুটো জ্বেলে আগুন পোয়াচ্ছিলেন অনেকে মিলে। রিকশা চালানো সত্যিই শক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই ঠান্ডায় কনকনে হাওয়া ঠেলে রিকশা নিয়ে যাওয়া যতটা কঠিন, রিকশা ছাড়া শহরের মধ্যে ঘোরাফেরা করাও ততটাই কঠিন। তাই রিকশা ভাড়া কোথাও কোথাও বেশি চাওয়া হয়েছে। কোথাও রিকশা না-মেলার অভিযোগ উঠেছে।
দোকানপাট খুলেছে দেরি করে। তাই যে পর্যটকেরা রবিবার নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের পুরাতত্ত্ব সম্মেলন ছিল। তাতে যোগ দিতে কল্যাণী থেকে এসেছিলেন গবেষক অভিষেক অধিকারী। তাঁর কথায়, “কুয়াশায় যা দেরি হওয়ার হয়েছে। কিন্তু সে কথা পরে। কল্যাণী থেকে নবদ্বীপ পর্যন্ত রাস্তা জনমানব শূন্য ছিল। এমনকী পথের ধারে চায়ের দোকান পর্যন্ত খোলা পাইনি।”
খেয়াঘাটেও একই অবস্থা। খেয়া চলাচল ছিল অনিয়মিত। ভিড়ও ছিল বড়দিনের আগের রবিবারে যা প্রত্যাশা করা হয়, তার থেকে অনেক কম। হোটেল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, শনিবার যাও কিছু ভিড় ছিল, রবিবার তার থেকেও প্রায় ত্রিশ শতাংশ ভিড় কম হয়েছে। মায়াপুরের হোটেল ব্যবসায়ী প্রদীপ দেবনাথের কথায়, “যাঁদের সঙ্গে ছোট বাচ্চা বা একটু বেশি বয়সের কেউ রয়েছেন, তাঁরা দ্রুত ফিরছেন। রবিবারের অনেক বুকিং বাতিলও হয়ে গিয়েছে। আসলে লোক শীত চান, কিন্তু সঙ্গে রোদও চান। মেঘলা দিন তাঁদের তেমন পছন্দের নয়।” ব্যারাকপুরের সুখেন সরকার পরিবার নিয়ে কয়েকটা দিন থাকবেন বলে এসেছিলেন। তিনি বললেন, “এই ঠান্ডায় কোথাও বেরোতেই পারছি না। এর থেকে নিজের বাড়ি ভাল। তাই চলেই যাচ্ছি।”
চলে যাচ্ছি--এই কথাটাই যেন শীতের হাওয়ার থেকেও বেশি কঠিন ভাবে বিঁধেছে পর্যটনের উপরে নির্ভর করে থাকা শহরগুলিতে। |
|
|
|
|
|