একে হাড় কাঁপানো শীত। তার উপর ঘন কুয়াশা। আর এই দু’য়ের দাপটে কয়েকদিন ধরেই বিপর্যস্ত নদিয়ার জনজীবন। রবিবার ভোর থেকে এক ধাক্কায় হু হু করে নামতে শুরু করেছে পারদ। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইছে হাড়হিম করা উত্তরের হাওয়া। তারউপর কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা ঘন কুয়াশা এ দিন আরও গাঢ় হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত কার্যত সূর্যের দেখাই মেলেনি। কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে জেলাবাসী হাপিত্যেশ করে বসে থেকেছে সূর্যের দেখা পাওয়ার আশায়। এই প্রবল শৈত্যপ্রবাহে জেলার পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বাস, ট্রেন সবই চলছে অনিয়মিত। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ যাত্রী সকলে।
|
দিনকয়েকের লাগাতার কুয়াশার দরুন শিয়ালদ-কৃষ্ণনগর, শিয়ালদহ-লালগোলা লাইনে ট্রেন চলাচল বেলা পর্যন্ত ছিল অনিয়মিত। রেল সূত্রের খবর, সকালের দিক লোকাল-সহ অন্যান্য ট্রেন গড়ে আধঘণ্টা করে দেরিতে চলেছে। ফলে এ দিনও যাঁদের অফিস যেতে হয়েছে এবং সাধারণযাত্রীদের বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।
নিত্যযাত্রী পরিমল বিশ্বাস বলেন, “সকলের দিকে প্রতিটি ট্রেনই কমপক্ষে আধঘণ্টা করে দেরিতে চলছে। ফলে বেশিরভাগ অফিসযাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারছেন না। কিন্তু কারও কিছু করারও নেই।
ঘন কুয়াশায় কয়েক হাত দূরের জিনিসই ঠিকমতো দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এই অবস্থায় স্বাভাবিক গতিতে ট্রেন চললে যে কোনও মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” একই বক্তব্য কৃষ্ণনগরের উপ স্টেশন অধিকর্তা রজত বসুর। তিনি বলেন, “ভোরের দিকের ঘন কুয়াশায় ট্রেন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। খুব সাবধানে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। ফলে বেলা পর্যন্ত বেশিরভাগ ট্রেনই চলছে কমপক্ষে আধঘণ্টা করে দেরিতে চলছে।” তবে রবিবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। একেই তো কুয়াশা তার উপর শনিবার রাত ১১টা থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত ব্যারাকপুরে উড়ালপুরে নির্মাণকাজ চলায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল না। তবে কৃষ্ণনগর থেকে নৈহাটি পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন চালানো হয়েছে। সোমবারের সকালও যদি একই রকম ঘন কুয়াশায় ছেয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য দিনের মতই ট্রেন অনিয়মিত চলবে বলে ধারনা রেলকর্তাদের।
|
কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে বাস চলাচল। জেলার ৬১টি রুটের প্রায় ৬৮০টি বাস চলে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় বেলা পর্যন্ত অনেক বাসই বাতিল হয়েছে। ফলে সকালের দিকে অনেকযাত্রীই সমস্যায় পড়ছেন। বিপজ্জনকভাবে ধীর গতিতে কিছু বাস অবশ্য চলছে। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পরিচালন সমিতির সদস্য অসীম দত্ত বলেন, “কয়েকদিন ধরে পড়তে ঘন কুয়াশার জন্য অনেক বাস বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এছাড়া কোনও উপায় নেই।” বাস মালিকেরা জানিয়েছেন, কুয়াশার মধ্যে উপর দুরপাল্লায় দ্রুতগামী বাসগুলোকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় সড়কে বাস চালানো খুবই বিপজ্জনক ও কঠিন কাজ। একে সকালের দিক বাস মেলাই কঠিন। তার উপর বাসগুলি চলছে শম্বুকগতিতে। ফলে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। অনেকে আবার দেরি হয়ে যাওয়ায় ট্রেন ধরতে পারছেন না। কৃষ্ণনগর-করিমপুর রুটের নিত্যযাত্রী সুজয় কর্মকার বলেন, “শীত সহ্য হয়। ঠান্ডাতে যাতায়াতে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু কুয়াশায় বাস পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। তার উপর বাসগুলি চলে অত্যন্ত ধীর গতিতে।” তাঁর কথায়, “বিপদ বুঝে চালকদের জোরে চালাতেও বলতে পারি না। তাই শীত স্বাগত। কিন্তু কুয়াশা নয়।” |