কীটনাশক প্রয়োগ করেই তিস্তা নদীতে মাছ মারা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষায় জানা গিয়েছে। গত মঙ্গল ও বুধবার জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা নদী বাঁধের ১ নম্বর স্পার এলাকার ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে মৃত মাছ ভেসে ওঠে। তিস্তা নদীতে থেকে সংগ্রহ করা মৃত মাছ এবং জলের নমুনা রাজ্যের দুটি গবেষণাগারে পরীক্ষা চলছে। মৎস্য দফতরের সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে দফতরের রাজ্য গবেষণাগার পৈলানে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তাদের কলকাতার কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জলে বিষাক্ত কীটনাশক মেশানোর কথা জানানো হয়েছে। জলপাইগুড়ির মৎস্য দফতরের আধিকারিক পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “তিস্তাতে প্রথম দিনই আমাদের নিজস্ব গবেষণাগারে জলের নমুনা পরীক্ষা করে বিষ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কী ধরনের বিষ জানতে রাজ্যের গবেষণাগারে নমুনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে তীব্র কীটনাশক জলে মেশানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।” কীটনাশক মেশানোর কথা জানিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “জলে বিষ মিশিয়ে মাছ মারা হয়েছিল। কোন ধরনের বিষ সেটা জানতে নমুনা পরীক্ষা চলছে।” প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চা বাগানে রেড স্পাইডার বা অন্যান্য রোগ ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে এক ধরনের বিষাক্ত কীটনাশক ছেটানো হয়। সেগুলিই বেশি পরিমাণে নদীতে মাছ মারতে ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ফিনাইল মেশানো হয়ে থাকতে পারে বলে পরীক্ষায় জানা গিয়েছে। বেশি পরিমাণে মাছ ধরতেই নদীর জলে বিষাক্ত কীটনাশক মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত মৎস্য দফতর। প্রশ্ন হল, কে বা কারা এই বিষ মিশিয়েছে? জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “জলপাইগুড়িতেই এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে। সেটাও খোঁজ নেওয়া জরুরি। তবে তার আগে যারা এই বিষকাণ্ডের জন্য দায়ী তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। সে কারণে পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছি।’’ তিস্তা নদীতে বিষকাণ্ডের পরে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তরফেও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত যাতে শেষ হয় তার নির্দেশ দিয়েছি।” গত বছর নভেম্বর মাসে জলপাইগুড়ি শহরের বুক চিরে যাওয়া করলা নদীতে বিষক্রিয়ায় নদী জুড়েই প্রচুর মাছের মৃত্যু হয়। বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছিল বলে তদন্তে জানা যায়। সেই সময় জলের এবং মৃত মাছের নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায় নিষিদ্ধ কীটনাশক এন্ডোসালফান মিশে যাওয়ায় শহরে নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিষক্রিয়া হয়। সেই ঘটনার তদন্তের পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে জানানো হয়, প্রচুর পরিমাণে এন্ডোসালফান নদীতে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। তিস্তা কাণ্ডের পরেও একই ধরনের বিষ মেশানো হয়েছে বলে সন্দেহ মৎস্য দফতরের। |