টিকিটের দাম বাড়ানোয় বন দফতরের কুঞ্জনগর ও খয়েরবাড়িতে পর্যটকদের ভিড় কমছে। বড়দিনের দু’দিন আগে রবিবার দুই জায়গায় ভিড় অস্বাভাবিক হারে কমেছে। টিকিটের দাম শুনে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কুঞ্জনগরে গত বছর পর্যন্ত টিকিটের দাম ছিল ১০ টাকা। সেটা হয়েছে ৪০ টাকা। খয়েরবাড়ির প্রবেশ মূল্য ছিল ১৫ টাকা। সেটাও ৪০টাকা করা হয়েছে। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে, গত এক বছরে বন দফতর ওই দুই পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবস্থা না নিয়ে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে। চার মাস ধরে এক মাত্র গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় খয়েরবাড়িতে ১ কিমি এলাকা জুড়ে এনক্লোজারের ভিতরে চিতাবাঘ দেখানো বন্ধ আছে। |
অচল বনভ্রমণের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র। |
কুঞ্জনগরে প্রতি বছর শিশুদের হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল ঘোরানোর ব্যবস্থা থাকলেও এ বার এখনও শুরু হয়নি। কেন পরিকাঠামোর উন্নয়ন না করে টিকিটের দাম এক ধাক্কায় কয়েকগুণ বাড়ানো হল! কী বলছেন বনকর্তারা? কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় টিকিটের দাম বাড়াতে হয়েছে। কুঞ্জনগরের হাতিটি অসুস্থ। সুস্থ হলে ‘জয় রাইডিং’ শুরু হবে। খয়েরবাড়ির বিকল গাড়িটি সরিয়ে কলকাতা থেকে একটি নতুন গাড়ি কিনে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু বনকর্তারা ওই সমস্ত আশ্বাস পর্যটকদের কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না। কুঞ্জনগর ও খয়েরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া কয়েকজন পর্যটকের অভিযোগ, তিন বছর থেকে বন দফতর এখানে কোনও কাজ করেনি। তাই শুধু আশ্বাস শুনে কী লাভ। কাজ শুরু হোক আগে। কেনই বা এমনটা বলবেন না! কুঞ্জনগরে কয়েকটি শেড ভেঙেছে। দু’টি চিতাবাঘের জায়গায় একটি আছে। ঘড়িয়ালের সংখ্যা সেই তিনটিতেই আটকে। হরিণের সংখ্যা আগের মত নেই। পরিচর্যার অভাবে গাছ শুকিয়েছে। একই দশা খয়েরবাড়ির। সেখানে এনক্লোজারের ভিতরে পাঁচ-ছয়টি চিতাবাঘ থাকত। এখন মাত্র দু’টি আছে। পাশের খাঁচাতে আরও ন’টি বাঘ থাকলেও সেগুলিকে বড় এনক্লোজারের ভিতরে আনা হয় না। কুঞ্জনগরে আসা শিলিগুড়ির বাসিন্দা সুব্রত কর্মকারের কথায়, “কয়েক বছর আগে এর চেয়ে অনেক ভাল অবস্থা ছিল কুঞ্জনগরের।
টিকিটের দাম বাড়ালেও নতুন কিছুই নেই।” ১৯৯৬ সালে জলদাপাড়া লাগোয়া বুড়ি তোর্সা নদীর ধারে কুঞ্জনগর প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি করে বন দফতর। ২০০৩ সালে খয়েরবাড়ি জঙ্গলের মধ্যে লেপার্ড রেসকিউ সেন্টার তৈরি হয়। এর পর থেকে ওই দুটি জায়গায় পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর মাসে বেশি ভিড় হয়ে থাকে এখানে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবার সারা বছরে দুই জায়গায় ২৭ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এ বার টিকিট বিক্রি কমলেও টাকা কমবে না বলে বনকর্তাদের দাবি। এ দিকে টিকিটের দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ আড়াল করতে পারেননি রাজ্যের প্রাক্তন বন মন্ত্রী যোগেশ বমর্ন। তিনি বলেন, “পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর নেই। অথচ টিকিটের দাম বাড়ানো হল কয়েকগুণ। এটা মানা যায় না। এ ভাবে চললে মানুষ আর আসবে না।” |