কলকাতার সন্তোষপুর স্কুলের দেখানো পথে অন্যরাও যে অচিরেই হাঁটবে, এমন আশঙ্কা ছিল। বুধবার, টেস্ট-এ ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে মুর্শিদাবাদের সেখালিপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী, অভিবাবকেরা দুপুর থেকে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে সে কথাই প্রমাণ করল।
গত কয়েক বছর ধরে লালগোলা ব্লকের ওই স্কুলের ফল তেমন ভাল হচ্ছিল না। এ বছর তাই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় যথাক্রমে ২১ ও ৩৯ জন ছাত্রছাত্রীকে আটকে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত ১০ ডিসেম্বর ফল বের হওয়ার পরে অভিবাবকদের ডেকে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের খাতাও দেখানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিন সরাফি। তিনি বলেন, “রিচালন সমিতির কর্তা, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীদের ডেকে এ নিয়ে বৈঠকের পরে পাশ করা ছেলে-মেয়েদের তালিকা গত মঙ্গলবার সংসদের পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু বুধবার আটমকাই জনা কয়েক উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্র স্কুলে এসে শিক্ষকদের ঘিরে ধরে। তকাতর্কি শুরু হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অভিভাবকও স্কুলে চলে আসেন। স্কুল গেটে তালা ঝুলিয়ে অতঃপর শুরু হয় বিক্ষোভ। |
তবে, প্রধান শিক্ষক বলেন, “কোনও মতেই টেস্টে অনুত্তীর্ণদের পাশ করানো হবে না। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল-সহ সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করেই টেস্টে পাশ-ফেল-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের নড়চড় হবে না।” স্কুলের সম্পাদক কংগ্রেসের আবুল কাশেমও স্কুলের শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের উপরেই সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর কথা, “স্কুলের পঠনপাঠন সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালন সমিতি কোনও সময়েই মাথা গলায়নি। এ ক্ষেত্রেও গলাবে না।”
সেখালিপুর হাইস্কুলটি লালগোলার পুস্তমপুরে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে স্কুলে। রয়েছেন ৩৬ জন শিক্ষক। এ বার দশম শ্রেণিতে ২৪৭ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ২১ জন এবং উচ্চমাধ্যমিকে ১৯০ জনের মধ্যে ৩৯ জন টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়। সাহিন বলেন, “১০ ডিসেম্বর শিক্ষকদের সঙ্গে বসে পাশ-ফেলের তালিকা তৈরি হয়। মূলত টেস্ট পরীক্ষার মার্কস, বছরভর উপস্থিতি এবং ধারাবাহিক ভাবে ভচ ভর চলা পরীক্ষাগুলির মার্কসএই ৩টি দিক খতিয়ে দেখেই টেস্টে দুটি ক্লাসে ৬০ জনকে অনুত্তীর্ণ রেখে তালিকা টাঙানো হয়। সেই মত পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফর্ম পূরণও করা হয় ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর।”
সাহিন বলেন, “বুধবার সাড়ে ১০টা নাগাদ স্কুলে যেতেই এক দল অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী আমার ঘরে ঢোকে। একটি খবরের কাগজ দেখিয়ে তারা দাবি জানায়, কলকাতার সন্তোষপুরের ছাত্ররা যদি পাশের সুযোগ পায় তবে আমরা তা পাব না কেন? বহু ক্ষণ ধরে বুঝিয়ে তাদের স্কুলের বাইরে পাঠানো হয়। এর পরেই দেখা যায়, কিছু বহিরাগত যুবককে নিয়ে তারা প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে আমাদের স্কুলেই আটকে দিয়েছে।” স্কুলের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সোনালী গুপ্ত বলেন, “যারা ফেল করেছে তাদের খাতা অভিভাবকরা অনেকেই দেখেছেন। কোনও রকমে এক বিষয়ে পাশ করেছে কেউ। গত বছর মাধ্যমিকে প্রায় ২৪০ জনের মধ্যে ৪৭ জন এবং উচ্চমাধ্যমিকে ২০৫ জনের ৯৭ জন ফেল করে। এই খারাপ ফলাফলের দিকে তাকিয়েই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এতে সকলের মত রয়েছে। এমনকী ওই সিদ্ধান্তে পরিচালন সমিতিরও সম্মতি রয়েছে।”
স্কুলের ওই বক্তব্য অবশ্য মানতে রাজি নয় মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ সফেদা খাতুন, উচ্চমাধ্যমিকের খাইরুল শেখ বা জ্যোৎস্না খাতুনেরা। তাদের কথা, সন্তোষপুরের মত আমাদেরও পাশ করার সুযোগ দিতে হবে। তৃণমূলের জেলা শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান শেখ ফুরকান বলেন, “শিক্ষকেরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সব দিক বিবেচনা করেই। কাজেই সেই সিদ্ধান্তকে মানতেই হবে। স্কুলে এ ধরণের বিক্ষোভ বাঞ্ছনীয় নয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকেই। তারা যদি তা না পারেন তবে ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের মত শিক্ষা সংশদকে ঘটনা জানিয়ে তাদের হস্তক্ষেপ চাইতে পারেন।” প্রধান শিক্ষক অবশ্য বলেন, “বিক্ষোভকারীরা তো স্কুলেরই ছাত্রছাত্রী। তাই ওদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে চাই না বলেই প্রশাসন ও পুলিশকে ডাকা হয়নি সন্ধ্যে পর্যন্ত তালা বন্ধ অবস্থাতেই আলোচনা চলছে। তবে অনুত্তীর্ণদের পাশ করানো কোনও মতেই সম্ভব নয়।” বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই আলোচনা চালাচ্ছে। তাই আমরা এখনই হস্তক্ষেপ করছি না। আমি ঘটনার কথা জানি। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি।” |