|
|
|
|
চাল বেচে নেশা ঠেকাতে হবে শিবির |
সুমন ঘোষ • আমলাশোল (বেলপাহাড়ি) |
২০০৪ থেকে ২০১২ আট বছরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। অনাহার ঘুচেছে। মাথার উপর ছাদ জুটেছে। তবু বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রাম সার্বিক উন্নয়ন থেকে এখনও অনেক দূরে। সেই সঙ্গে রয়েছে সচেতনতার অভাব।
বুধবার এ সবই নিজের চোখে দেখলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কথা বললেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। স্থানীয় বাসিন্দা তমাল দাস মন্ত্রীর সামনেই চিৎকার শুরু করেন, “দৈন্যদশা কাটবে কী করে? রেশনে চাল পেলে অর্ধেক চাল বেচে দেয়। সেই টাকায় নেশা করে।” সব শুনে মন্ত্রীর জবাব, “বুঝতে পারছি, সচেতনতার অভাব রয়েছে। সচেতনতা তৈরি করতে শিবির হবে। এখন সরকার যে চাল দেয় তাতে তো উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। কোনও দিন খাবারের অভাব হওয়ার কথা নয়। শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলেই সমস্যা মিটে যাবে।” |
|
গ্রামবাসীর সঙ্গে মন্ত্রী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
২০০৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি ব্লকের আমলাশোল গ্রামে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তা নিয়ে হইচই পড়েছিল দেশ জুড়ে। সরকার পরিবর্তনের পরে এক বার আমলাশোলে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। এ দিনও এলেন। আবারও শুনলেন অনুযোগ। অনাহারে মৃত সময় মাণ্ডির মেয়ে মালতী বলেন, “রেশনে চাল মিলছে ঠিকই। তবে কিছুদিন ধরে ২ কেজির পরিবর্তে ১ কেজি চাল পাওয়া যাচ্ছে।” লালু শবর, মুগী শবর, লক্ষ্মীমণি শবরদের কথায়, “এখন রেশনে চাল পাচ্ছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা ও ওষুধও পাচ্ছি।” আমলাশোলে রাস্তা রয়েছে, রয়েছে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অদূরেই রেশন দোকান। গ্রামের মধ্যেও রেশন দোকান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবু সর্বত্র এত দৈন্যের ছাপ কেন? লালু, লক্ষ্মীমণিদের জবাব, “জমি নেই। কাজও নেই। সারাদিন কাজ করলে ৬ পাই ধান আর এক বেলা খাবার পাই!’’
মন্ত্রীর সঙ্গেই এ দিন ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। তাঁর স্বীকারোক্তি, “অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। আরও করতে হবে।” এই আরওর মধ্যেই রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধি ও যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবার বন্দোবস্ত। খাদ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, “যত ওষুধ প্রয়োজন হবে আমি ব্যবস্থা করে দেব। আর সচেতনতা শিবির তো করবই।” সেই সঙ্গে মন্ত্রীর ঘোষণা, “এ বার থেকে আমলাশোলে আর গম নয়, সকলকে আটা দেওয়া হবে। কারণ, গম পেষাই করতে ঘাটশিলা যেতে সমস্যা হয়।” গ্রামে দাঁড়িয়েই জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়কে মন্ত্রী নির্দেশ দেন, “এ বার থেকে আমলাশোলের জন্য গমের পরিবর্তে আটা দেবেন।” |
|
বিনপুরে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা |
সপ্তাহে একবার করে যাতে খাদ্য দফতরের আধিকারিক এলাকা পরিদর্শনে আসেন, রেশনের খাদ্যশস্য সবাই ঠিক ভাবে পাচ্ছেন কি না খতিয়ে দেখেন, সেই নির্দেশও দেন মন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয় নিজেও এ দিন আমলাশোলের রেশন দোকান পরিদর্শন করেন। চালের গুণগত মান পরীক্ষা করে বলেন, “ঠিক আছে।”
এ দিন বেলপাহাড়ি ও দহিজুড়িতে সরকারি মূল্যে ধান কেনার শিবিরেও উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। শিবির থেকে ঘোষণা করা হয়, জঙ্গলমহলে স্থায়ী শিবির করে ধান কেনা হবে। কোনও গরিব চাষি যদি ৫০ কেজি ধান নিয়ে আসেন তা-ও কিনতে হবে।” বাঁকুড়ায় ৩টি, পুরুলিয়ায় ৫টি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ১২টি শিবির করা হবে বলে তিনি জানান। এখনও জঙ্গলমহলের যে সব মানুষ রেশন কার্ড পাননি তাঁদের কার্ড দিতে ১৫-৩০ জানুয়ারি শিবির করে কার্ড বিতরণ করার কথাও ঘোষনা করেন। মন্ত্রী বলেন, “আগে রাজ্যকে ছত্তীসগঢ় থেকে চাল নিয়ে আসতে হত। এখন আমরা বাইরে থেকে চাল আনব না। তামিলনাড়ু ১ লক্ষ মেট্রিক টন চালের অর্ডার দিয়েছে আমাদের। তাদের চাল দেব। কেরলকেও চাল দেব।”
এ দিনের শিবিরে মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি, ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এলাকায় শান্তি ফিরেছে এই বার্তা দিয়ে ভারতীদেবী বলেন, “আগে একটা সময় ছিল, যখন রাস্তায় বেরনো যেত না। হয় জওয়ানেরা রাস্তায় ঘুরত, নাহলে একদল লোক বন্দুক হাতে ঘুরত। এখন রাজ্য সরকার উদ্যোগী হওয়ায় এখানে আমরা অনুষ্ঠান করছি।”
|
|
|
|
|
|