মা, ম্যায় জিনা চাহতি হুঁ
ভুল মেনে ফাঁসি চাইল অভিযুক্ত
বাহাত্তর ঘণ্টা ধরে চলছে লড়াই। পাঁচ পাঁচটি অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে। তাতে বাদ গিয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্রের পচন ধরা অংশ। ডাক্তাররা বলছেন, অবস্থা আশঙ্কাজনক, তবে আপাতত কিছুটা স্থিতিশীল। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, তাঁদের দেখা সব চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা এটা। কিন্তু তাতেও লড়াইয়ে ভাটা পড়েনি দিল্লির ২৩ বছরের প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীটির। হুইল চেয়ারে করে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার মুখে তিনি মাকে বললেন, “মা, ম্যায় জিনা চাহতি হুঁ।” পুলিশকে বিশদে জানিয়ে গেলেন, সেই নারকীয় বাসযাত্রার কথা।
দিল্লি হাইকোর্টে আজ মেয়েটির সঙ্গীরও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে সেই প্রক্রিয়া। তবে তিনি কী বলেছেন, তা জানা যায়নি। আপাতত সে সব খামবন্দি।
এই ঘটনার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছে, খোদ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্র যে ভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মানুষ, তার মূল সুর একটাই: এমন অপরাধ যারা করেছে, তাদের ফাঁসিতে ঝোলাও। এমন পরিস্থিতির মুখে আজ ভেঙে পড়েছে এক অভিযুক্ত। পবন গুপ্ত নামে ওই ফলবিক্রেতা বলে, “আমি মেনে নিচ্ছি, অপরাধ করেছি। আমাকে ফাঁসি দেওয়াই উচিত।” তবে হঠাৎ এই স্বীকারোক্তিতে প্রশ্ন উঠছে, এটা কি সত্যিই বোধোদয়, নাকি স্রেফ লঘু শাস্তি এবং সহানুভূতি পাওয়ার আশায় বলছে পবন?

দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে পড়ুয়ারা।
বুধবার ইন্ডিয়া গেটের সামনে। ছবি: এএফপি
একই আশায় অন্য পন্থা নিয়েছিল জিম ইনস্ট্রাকটর বিনয় শর্মা। তার দাবি, “ছেলেটাকে রড দিয়ে মারলেও, মেয়েটাকে আমরা মারিনি।” তবে অন্য এক সূত্রের খবর, পরে সে-ও অপরাধ স্বীকার করে নেয়। এমনকী, পবনের মতো সে-ও নিজের জন্য ফাঁসিই চেয়েছে। আজই আবার বিহারের ঔরঙ্গাবাদ থেকে আটক করা হয় পঞ্চম অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুরকে। সকলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের সঙ্গে খুনের চেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে। জেরা করা হচ্ছে পবন ও বিনয়কেও। টিআই প্যারেডে রাজি হওয়ায় মুকেশকে তিহাড় জেলে পাঠানো হয়েছে। তার দাদা রাম সিংহ আবার পুলিশি জেরায় জানিয়েছে, সে মদ্যপ ছিল। তাই মেয়েটি ধর্ষণে বাধা দিতে যাওয়ায় তার রাগ চড়ে যায়। তখন সে লোহার রড দিয়ে তাকে এবং তার পুরুষ বন্ধুকে প্রচণ্ড মারে। তার সঙ্গে যোগ দেয় অন্যরাও।
গোটা ঘটনায় পুলিশকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কী ভাবে তাদের চোখ এড়িয়ে ৪০ মিনিট ধরে শহরের রাজপথে বাসের মধ্যে এমন ভয়াবহ তাণ্ডব চালাল অভিযুক্তরা, পুলিশের কাছে তা জানতে চেয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। দু’দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।
বলিউডে নিন্দা
রবিবার অনেক কিছু লিখব ভেবেছিলাম। কিন্তু দিল্লির ঘটনাটা ভয়ঙ্কর বিচলিত করে দিল। ওই তরুণীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই। পশুরাও এমন ব্যবহার করে না।
অমিতাভ বচ্চন
দুনিয়াটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলার কোনও অর্থ নেই। দুনিয়াটা আমাদের নিয়েই তৈরি এবং আমরা যদি ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি না দিই, তা হলে খুব শিগগির আমাদের নিজেদেরই শাস্তি পেতে হবে।
শাহরুখ খান
কোনও মেয়ে ছোট পোশাক পরেছিল বা রাতে বেরিয়েছিল বলে ধর্ষিত হয় না। কেউ তাকে ধর্ষণ করে বলে সে ধর্ষিত হয়। এর জন্য কোনও অজুহাত লাগে না।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া
যানবাহনে কালো কাচ ব্যবহার করা যাবে না বলে যে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট, তা লঙ্ঘন করা হল কেন, তাই নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আদালত। পুলিশ কমিশনারের কাছে জবাবদিহিও চাওয়া হয়েছে। তা ছাড়া শুধু তদন্তই নয়, এ ধরনের অপরাধ দমনে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে আদালত। বিচারপতি মুরুগেশন বলেন, “যদি সম্ভব হয়, তা হলে ওই তরুণীকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সরিয়ে আনা হোক। একান্তই যদি না পারা যায়, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হোক ওই হাসপাতালে।” আজ দিল্লি হাইকোর্টের তরফে আরও ঘোষণা করা হয়, মহিলাদের উপর যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত যে কোনও মামলার বিচার হবে ফাস্ট ট্যাক আদালতেই।
তরুণীকে দেখতে আজ সফদরগঞ্জ হাসপাতালে গিয়েছিলেন লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার। মেয়েটির মায়ের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। পরে স্পিকারের মুখে শোনা গেল, মেয়েটির দরিদ্র পরিবার দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতেও অক্ষম। অধিকাংশ দিন নুন-রুটি খেয়েই সংসার চলে তাদের। এক টুকরো জমি ছিল। সেটা বিক্রি করেই কোনও মতে মেয়ের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছিলেন বাবা। ধরা গলায় বললেন, “যেন আর কারও সঙ্গে এমন না হয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.