কালনার স্কুল
টেস্টে অনুত্তীর্ণ হয়ে ঘেরাও শিক্ষিকাদের
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছিল ২৭ জন ছাত্রী। পাশ করানোর দাবিতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা স্কুলের শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল সেই ছাত্রীদের একাংশ, তাদের বাড়ির লোকজন ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে কালনার কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। বিকেলে শিক্ষিকারা পরিচালন সমিতির সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, অকৃতকার্য ছাত্রীদেরও মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করা হবে। এর পরে বিক্ষোভ থামে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, চাপে পড়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁদের।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার টেস্ট পরীক্ষায় বসেছিল ১১৭ জন ছাত্রী। উত্তীর্ণ হয় ৯০ জন। ৮ ডিসেম্বর ফলপ্রকাশ হয়। অনুত্তীর্ণের তালিকায় থাকা বেশ কিছু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকেরা এই ফলাফলে অসন্তুষ্ট ছিল।
অবস্থান বিক্ষোভে ছাত্রীরা। বুধবার কেদারনাথ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
অনেকে স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কমলকৃষ্ণ দে-র কাছে গিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখানোর দাবি জানান। স্কুলের তরফে অনুত্তীর্ণদের খাতা দেখানোর উদ্যোগও হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরে বেশির ভাগ অভিভাবকেরাই খাতা দেখার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাননি। সোমবার অনুত্তীর্ণ ছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়। কেন ২৭ জন অকৃতকার্য হল, তা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আলোচনা চলার সময়ে অভিভাবকদের একাংশ অভিযোগ করেন, খাতা ঠিক মতো দেখা হয়নি। কয়েক জন উত্তেজিত হয়ে শিক্ষিকাদের কমনরুমে ঢুকে পড়ে গালিগালাজও করেন বলে অভিযোগ। কালনা থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, বুধবার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য স্কুলে এসেছিলেন শিক্ষিকারা। কমনরুমে বসেই কাজ সারছিলেন তাঁরা। দুপুর ১২টা নাগাদ মাধ্যমিকের টেস্টে অনুত্তীর্ণ এগারো জন ছাত্রী স্কুলে ঢোকে। তাদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকেরা ও স্থানীয় কিছু যুবক। ওই ছাত্রীরা দাবি করে, তাদের খাতা ঠিক মতো দেখা হয়নি। তাই তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রীদের এই দাবি প্রথমে আমল দিতে চাননি শিক্ষিকারা। তাঁরা নথিপত্র দেখিয়ে জানিয়ে দেন, কারা মাধ্যমিকে বসতে পারবে, সেই তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফর্ম পূরণও হয়ে গিয়েছে। তাই অনুত্তীর্ণদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার উপায় নেই।
ছাত্রীরা অবশ্য তাদের দাবিতে অনড় থাকে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ তারা কমনরুমের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে। কিছুক্ষণ পরে দরজা বাইরে থেকে বন্ধও করে দেয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক ভিতরে আটকে থাকেন ১৬ জন শিক্ষিকা। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। শেষে ভিতর থেকে আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হলে কমনরুমের দরজা খোলা হয়। বাইরে বেরিয়ে শিক্ষিকারা ছাত্রীদের এমন আচরণে ক্ষোভপ্রকাশও করেন।
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ স্কুলে যান পরিচালন সমিতির সম্পাদক কমলকৃষ্ণবাবু। তিনি শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আধ ঘণ্টা বৈঠকের পরে তাঁরা অভিভাবকদের ডেকে জানান, মেয়েদের পড়াশোনায় উন্নতির ব্যাপারে অঙ্গীকার করে বৃহস্পতিবার একটি মুচলেকা দিতে হবে তাঁদের। তার পরেই টেস্টে অনুত্তীর্ণ ছাত্রীদের মাধ্যমিকের ফর্ম পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। অভিভাবকেরা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কেন তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, সে প্রশ্নে কমলকৃষ্ণবাবু বলেন, “ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল।” স্কুলে বিক্ষোভ দেখাতে আসা ছাত্রী পূজা রাজবংশী, বৈশাখী দাস, সপ্তমী হালদারদের দাবি, “আমরা ভাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু নম্বর দেওয়া হয়নি। মাধ্যমিকে বসতে দিলে আমরা ঠিক পাশ করব।” চন্দনা হালদার নামে এক অভিভাবকের বক্তব্য, “টেস্টে পাশ না করিয়ে এ ভাবে স্কুলে আটকে রাখা অনুচিত।” স্কুলের শিক্ষিকারা অবশ্য জানিয়েছেন, যে সব ছাত্রীরা অনুত্তীর্ণ হয়েছে, তারা বেশির ভাগ বিষয়েই কুড়ির কম নম্বর পেয়েছে। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শুভ্রা গোস্বামীর দাবি, নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে স্কুলের কাজকর্ম শিকেয় উঠতে পারে, এই আশঙ্কাতেই অনুত্তীর্ণ ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.