বিজয় দিবসে ভারতীয় লগ্নি উপহার চান ও দেশের মন্ত্রী
বাংলাদেশে কারখানা গড়লে কানাডা, জাপান বা ইউরোপের ক্রেতাদের হাতে বিনা শুল্কে পৌঁছে যাবে সেখানে তৈরি পণ্য। আর নামমাত্র শুল্ক লাগবে আমেরিকা বা চিনের বিরাট বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীদের বিনিয়োগ টানতে এই লোভনীয় টোপ হাতেই ও
গোলাম মহম্মদ কাদের
দেশের নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মহম্মদ কাদের এখন কলকাতায়। তাঁর সাফ কথা, এই সুযোগ নিতে বাংলাদেশে কারখানা গড়তে আসছে দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, এমনকী ইউরোপের চেক প্রজাতন্ত্রও। গুরুত্বপূর্ণ পড়শি দেশ কেন সেই সুযোগ নেবে না?
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের কোনও পরিকল্পনাই হতে পারে না। আর বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়ে মনমোহন সিংহ সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠে না। প্রায় সব বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ শুল্কমুক্ত করে দেওয়ার পর ভারতে এখন বাংলাদেশ থেকে নানা পণ্য আসছে। চেকপোস্ট ও পণ্য পরিবহণের মাধ্যমগুলিকে মসৃণ করে আমদানি-রফতানি আরও বাড়ানো যায়। তার বন্দোবস্তও হচ্ছে। কিন্তু কাদের সাহেবের মতে, ব্যবসার চেয়েও শিল্প এখন অনেক বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের। কারখানা হলে কাজ আসবে হাতে, বাড়বে জীবিকা। “মানুষের উন্নয়ন হলে তবেই না দেশের উন্নয়ন,” বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ভারতের সহযোগিতাতেই বিজয় অর্জন করেছি আমরা। আর আজকের বিজয় দিবসে ভারতীয় বিনিয়োগই হতে পারে সব চেয়ে বড় উপহার।”
বাংলাদেশে কারখানা গড়ে ভারতের সংস্থাগুলির লাভ?
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মহম্মদ এরশাদের সহোদর জিএম কাদের আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, “লাভ অনেক। আর সেই লাভের তালিকা নিয়েই আমি ভারতের বণিকসভাগুলির দোরে দোরে ঘুরছি। অল্প সময়ে সাড়াও মিলছে ভালই।” তাঁর কথায়, বাংলাদেশে তৈরি পণ্য কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ই ইউ-র ২৭টি দেশে শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ পায়। চিন আর আমেরিকা শুল্ক নেয় যৎসামান্য। সেই সুযোগ নিতেই অন্য দেশ বাংলাদেশে কারখানা গড়তে আসছে। ভারতও সুযোগ নিক। তা ছাড়া, মন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশের মতো এত উদার বিনিয়োগনীতি এই অঞ্চলের কোনও দেশের নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লাভের পুরোটাই দেশে নিয়ে যেতে পারে, শুধু বাংলাদেশের লোককে কাজ দিলেই চলবে। কাদেরের কথায়, ভারতের যে কোনও অঞ্চল থেকে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে পণ্য সরবরাহ বিরাট খরচের। বাংলাদেশে কারখানা গড়ে সেখানকার পণ্য এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহে যেমন খরচ কম পড়ে, বাকি পণ্য বিনা শুল্কে অন্য দেশে রফতানিও করা যায়।
কিন্তু ভারত-বিরোধী রাজনীতির চাপে টাটাদের যে ভাবে বাংলাদেশ থেকে প্রকল্প গুটিয়ে সরে আসতে হয়েছে, তার পরেও কি ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে যেতে চাইবে? আওয়ামি লিগ-জোট সরকারের মেজো শরিক জাতীয় পার্টির নেতা কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, ভারত-বিরোধী রাজনীতির দিন শেষ। বাংলাদেশের মানুষও বুঝছেন, পড়শি এই বড় দেশকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন অসম্ভব। ভারত-বিরোধী রাজনীতি যে বিএনপি-র পুঁজি, তার নেত্রী খালেদা জিয়াকেও তাই দিল্লিতে এসে বলে যেতে হয়, যা করেছি ভুল করেছি। কাদেরের কথায়, যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস যে যৎসামান্য দামে কিনে টাটাদের প্রকল্পটি করার কথা হয়েছিল, বাংলাদেশের পক্ষে তা অনুকূল ছিল না। তার পরেও হয়তো আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে প্রকল্পটি করা যেতো। যে ভাবে টাটারা ফিরে গিয়েছে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তির পক্ষে তা ভাল হয়নি। তবে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে কাদেরের মনে হয়েছে, সেই ছবি এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। তাঁরা লাভ ও নিরাপত্তা চান, ঢাকা সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
মাত্র তিন মাস দায়িত্ব পেয়েছেন। তার মধ্যেই দু-দু’বার এলেন কলকাতার বণিকমহলের দরবারে। শুক্রবার রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে বলছিলেন, “কলকাতাতেই কাদের সাহেবের জন্য একটা স্থায়ী বাসস্থান দেখুন। রোজই তো ওঁকে এখানে দেখছি!” প্রসঙ্গ তুলতে বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, “কোচবিহার যে আমার পৈত্রিক বাড়ি। আমি কি এখানকার লোক নই?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.