ঢের হয়েছে, আর নয়। চলতি বছরেই একাধিক বার বন্দুকবাজের দাপাদাপি দেখেছে আমেরিকা। কিন্তু বছর শেষের হামলার বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে তামাম আমেরিকাবাসীর এখন আকুতি যেন এটাই। মুক্তি চাই বন্দুকের নল থেকে।
গত কালের ঘটনা ছাপিয়ে গিয়েছে সব কিছুই। বছর কুড়ির বন্দুকবাজ অ্যাডাম ল্যানজা কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করে ২০টি শিশু-সহ মোট ২৮ জনকে। প্রেসিডেন্ট নয়, এতগুলো ফুটফুটে বাচ্চাকে হারানোর ব্যথা তাঁকে বিঁধেছে বাবার মতোই। এই হামলার পর চোখের জল মুছতে মুছতে কোনও রকমে কথাগুলো বলেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। ভবিষ্যতে এই রকম ঘটনা রুখতে পদক্ষেপ করা হবে, নিজের বার্তায় এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। আর এর পরই জোরদার হয়েছে গুঞ্জন, তা হলে কি সত্যিই পাল্টে যাবে দেশের অস্ত্র আইন?
নিউ ইয়র্কের মেয়র মিশেল ব্লুমবার্গ দীর্ঘদিন ধরেই কড়া অস্ত্র আইনের জন্য সওয়াল করে আসছেন। তাঁর কথায়, প্রিয়জনকে হারিয়েছেন যে মানুষগুলো, তাঁদের সমবেদনা জানানো তো ঠিকই আছে, কিন্তু এখন শুধু পদক্ষেপের কথায় আর কারোর মন গলবে না। ওবামার এক্ষুনি আইন তৈরি করে কংগ্রেসের কাছে পাঠানো উচিত। ‘মেয়রস এগেনস্ট ইললিগাল গানস’-এর সদস্য ব্লুমবার্গ। তাঁর অভিযোগ, ওকল্যান্ড থেকে ওক ক্রিক, সব ঘটনার পরই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, অস্ত্র আইনে রদবদল করার সময় আসেনি। এ রকম জাতীয় বিপর্যয়ের পর যদি আইন বদলানো না হয়, তা হলে আর কবে হবে, প্রশ্ন নিউ ইয়র্কের মেয়রের। |
নিহত পরিজনের স্মরণে শোকাহত পরিবার। শুক্রবার কানেক্টিকাটে। ছবি: এপি |
কড়া অস্ত্র আইনের পক্ষে তৈরি হয়েছে জনমতও। কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন আইন তৈরির পক্ষে ইতিমধ্যেই হোয়াইট হাউসের পিটিশন ওয়েবসাইটে জমা পড়েছে আট-আটটি আবেদন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলে হানার পরই এর মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয় সকলের সইয়ের জন্য। মুহূর্তের মধ্যেই ওই আবেদনে সই করেন ২৫ হাজার মানুষ। কাল বিকেলের মধ্যে তা পেরিয়ে গিয়েছে ৪৩ হাজারের গণ্ডিও। সবক’টি আবেদনেরই উদ্দেশ্য এক, চাপ বাড়ানো ওবামা প্রশাসনের উপরে।
দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রচারে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ওবামাকে। বাক-স্বাধীনতার মতোই অস্ত্র রাখা যে জরুরি, মার্কিনদের এই বিশ্বাসের উল্লেখ সে দিন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা বলে দুষ্কৃতীদের হাতে অনায়াসেই একে-৪৭ চলে যাক, এমনটা তিনি যে চান না, তা ও পরিষ্কার বলেছিলেন ওবামা। এর আগেও যখনই কড়া
অস্ত্র আইনের কথা উঠেছে, ক্রেতার অতীত যাচাইয়ের পক্ষে জোর দিয়েছেন স্বয়ং ওবামাই।
১৯৯৪ সালে সাধারণের ব্যবহারে আধা-সংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিতে দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিলেন বিল ক্লিন্টন। ২০০৪-এর সেপ্টেম্বরে শেষ হয় সেই সময়সীমা। নানা সমীক্ষায় উঠে আসে, অস্ত্র নিয়ে এতটা কড়াকড়ি মোটেই চান না দেশবাসী। ২০১২-র শেষে এসে, আতঙ্কের প্রহর তাড়া করে ফেরা মানুষগুলোই মত বদলালেন। |