টিভিটার দিকে তাকিয়ে মাথা কাজ করছিল না তাঁর। এ কী! তিনি অফিসে বসে, অথচ টিভিতে দেখাচ্ছে তাঁরই গুলিতে খুন হয়ে গিয়েছে ২৮ জন।
তিনি রায়ান ল্যানজা। টেলিভিশনের দৌলতে তত ক্ষণে গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক স্কুলে ঢুকে ৫ থেকে ১০ বছরের জনা কুড়ি পড়ুয়া-সহ শিক্ষিকা, কর্মীদের বেপরোয়া ভাবে খুন করেছেন এই ব্যক্তিই।
কী করা উচিত বুঝতে না পেরে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন রায়ান ল্যানজা। যাওয়ার সময় বসকে বলেন,
|
রায়ান ল্যানজা |
“আমাকে যেতেই হবে।” এ দিকে, আধ ঘণ্টার মধ্যেই রায়ানের খোঁজে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছে তাঁর বাড়ি-অফিসে। অল্প সময়েই ধরাও পড়ে
যান তিনি।
আবার মাঝখানের সময়টুকুতেই ঘটনার নিন্দা করে রায়ানের ফেসবুকে একের পর এক মন্তব্য আসতে শুরু করে। জবাবে তিনি লেখেন, “সবাই দয়া করে থামো। আমি নই।” ফের বলেন, “আমি এখন বাসে করে বাড়ি ফিরছি। আমি নই। এত ক্ষণ তো অফিসে ছিলাম।” এর পরেই রায়ানের বন্ধু ব্রেট উইলশে লেখেন, “এ সব কী হচ্ছে?” ব্রেট জানতে চান তিনি কেমন আছেন। তত ক্ষণে সম্ভবত ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছিলেন রায়ান। জবাব দিলেন, “আমার ভাই
করেছে এ সব। মা মনে হয় বেঁচে নেই। হে ভগবান!”
রায়ানের ভাই অ্যাডাম ল্যানজা কানেক্টিকাটের নিউটাউন হাই স্কুলে পড়ত। পড়শিরা জানিয়েছেন, ভাল ছাত্রও ছিল সে। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় অ্যাডামের। এর পর মায়ের বন্দুক দিয়েই তাঁকে মেরে, মায়ের গাড়ি নিয়ে স্যান্ডি হুক স্কুলের দিকে রওনা হয় সে। এই স্কুলেরই শিক্ষিকা ছিলেন অ্যাডামের মা ন্যান্সি ল্যানজা।
ঘড়িতে তখন সাড়ে ন’টা। স্যান্ডি হুক স্কুলে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে কালো পোশাকে শরীর ঢেকে স্কুলে পৌঁছে যায় বছর কুড়ির অ্যাডাম। সঙ্গে ছিল তিনটি বন্দুক। স্কুলে ঢুকেই বেপরোয়া ভাবে গুলি চালাতে শুরু করে সে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফোন যায় পুলিশের কাছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় তারা। পৌনে দশটা নাগাদ নিরাপত্তা বাহিনী ‘সোয়াট’-ও চলে আসে। কিন্তু তত ক্ষণে অ্যাডামের গুলিতে নিহত হয়েছে ২০টি শিশু। বয়স, কত হবে? বড়জোর ৫ থেকে ১০।
গুলির শব্দ শুনে পড়ুয়াদের বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল এবং আরও দুই শিক্ষিকা। এ সময় তাঁদের সামনে পড়ে যায় অ্যাডাম। গুলি চালিয়ে দেয় সে। মারা যান তিন জনেই। এর পর বেসামাল হয়ে নিজের দিকেও গুলি চালিয়ে ফেলে অ্যাডাম। মারা যায় সেও। |
আতঙ্কের প্রহর |
শুক্রবার সকাল- মা’কে খুন করে মায়ের গাড়ি নিয়েই বেরোল অ্যাডাম ল্যানজা। গলায় ঝোলানো ভাই রায়ানের পরিচয়পত্র। |
• সকাল ৯:৩০- ক্লাস শুরু স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে। |
• সকাল ৯:৩৫- গুলি চলার খবর পেয়ে পৌঁছে গেল পুলিশ। |
• সকাল ৯:৪০- অফিসে ও শিশু বিভাগে গুলির শব্দ। |
• সকাল ৯:৪৫- পৌঁছল বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। |
• সকাল ১০:৩০- নিজের গুলিতেই নিহত বন্দুকবাজ। |
• সকাল ১২:১০- পরিচয়পত্র দেখে ঘোষণা খুনির নাম রায়ান। |
• দুপুর ১:০৮- ঘোষণা, নিহত ২৮। |
• দুপুর ২:৪০- ফেসবুকে রায়ানের পোস্ট, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেনই না। |
• বিকেল ৫টা- প্রশাসনের ভুল স্বীকার। জানাল, খুনি অ্যাডাম। |
|
এ দিকে প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করে দেওয়া হয়, খুনি রায়ান ল্যানজা। পরে অবশ্য নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় পুলিশ। তারা এ-ও জানিয়েছে, অ্যাডামের দাদা তাদের সন্দেহের তালিকায় নেই। রায়ান জানিয়েছেন, ভাই তাঁর পরিচয় পত্রটি নিয়ে গিয়েছিলেন। সম্ভবত সেই থেকেই ভুল বোঝাবুঝি। অ্যাডামের বন্দুকগুলিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার কাছে দু’টি পিস্তল এবং একটি .২২৩ ক্যালিবার রাইফেল ছিল। রাইফেলটি পাওয়া গিয়েছে তার গাড়ির পিছন থেকে। পিস্তল দু’টি স্কুলের ভিতরেই মিলেছে।
কেন এমন করল অ্যাডাম? পুলিশের কাছে স্পষ্ট জবাব নেই। তবে, জানা গিয়েছে অটিজমে আক্রান্ত অ্যাডাম। তদন্তের স্বার্থে রায়ানকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে পুলিশ। জেরা করা হয়েছে, রায়ানদের বাবা পিটার ল্যানজাকেও। ন্যান্সির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে তাঁর। তবে এ দিন তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যদিও, সন্দেহজনক ভাবে, ঘটনার পর থেকেই নিরুদ্দেশ রায়ানের প্রেমিকা ও অন্য এক বন্ধু। |