রাজ্য জুড়ে ছেয়ে যাওয়া ভুঁইফোড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান কী ভাবে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তা-ই বারবার সামনে তুলে আনতে চাইছেন সিপিএম নেতারা।
কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। দলীয় মুখপত্রে ‘চিটফান্ড’-এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, বাম জমানায় পরিস্থিতিটা এখনকার মতো নিয়ন্ত্রণহীন ছিল না। এ বার মুখ খুললেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনও।
বাম আমলেই নন ব্যাঙ্কিং ফিন্যান্স কোম্পানির (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সংক্ষেপে এনবিএফসি) রমরমা হয়েছে বলে তৃণমূল নেতারা যে দাবি করছেন, তা ‘সুযুক্তি’ হিসেবে মানতে চাননি গত বিধানসভা নির্বাচনে নিজের বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে পরাজিত নিরুপমবাবু। শুক্রবার দুর্গাপুরে প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিটুর জেলা সভাপতি দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় তিনি বলেন, “কখন কে কাজ শুরু করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল অনৈতিক কাজে নজরদারি চালানো ও লাগাম টানা।” তাঁর মতে, তৃণমূল সরকার তা করতে ব্যর্থ।
দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি চতুরঙ্গের মাঠে এ দিনের সভায় শহরের বাইরে থেকেও প্রচুর সিপিএম কর্মী-সমর্থক এসেছিলেন। |
নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার, রাজ্য কমিটির সদস্য তথা কৃষকসভার নেতা মদন ঘোষ প্রমুখ। নিরুপমবাবু অভিযোগ করেন, রাজ্যের বর্তমান সরকারের কোনও আদর্শ নেই। ইতিমধ্যেই তারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙেছে। “এখন শাসকদল নিজেদের মধ্যেই মারামারিতে লিপ্ত। রাজ্যে প্রায় প্রতি দিন কোথাও না কোথাও মহিলারা নিগৃহীত হচ্ছেন। অথচ রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সে সব বামপন্থী ও কিছু সংবাদমাধ্যমের চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন” সংযোজন প্রবীণ নেতার। রাজ্যের বর্তমানে কী দশা এবং ভবিষ্যৎ কোন পথে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী টেনে আনেন তাঁর এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাধের সিঙ্গুর প্রকল্পের প্রসঙ্গও। তাঁর মতে, “ন্যানো প্রকল্প সানন্দে চলে যাওয়ায় সেখানকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সিঙ্গুরের মানুষের এই বিষয়টি বোঝা উচিত।” গত কিছু দিন ধরেই যে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বক্তৃতায় যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা তুলে আনছেন, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। বরং সিপিএম যে বারবার সন্ত্রাসের আশঙ্কার কথা বলছে, তারই ইঙ্গিত মিলেছে। নিরুপমবাবুর দাবি, “তৃণমূল বলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমকে নিষিদ্ধ করা হবে। আমরা নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রপ্রেমী সাধারণ মানুষ প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলে এর জবাব দেবেন।” |